সুন্দরবনের মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় শত কিলোমিটার দূরে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষে বয়ে গেছে প্রায় ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার এই চিত্রা নদী। চিত্রা চরের এ বনে বাঘ, হরিণ না থাকলেও স্থানীয়দের কাছে এর পরিচিতি এখন ‘মিনি সুন্দরবন’ নামে। এই ‘মিনি সুন্দরবন’ নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই তাদের। চিত্রার দুপাড়ে এখন যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজের হাতছানি। প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে ওঠা এ বনকে ঘিরে দিন দিন বাড়ছে দর্শনার্থীদের ভিড়। বিশেষ করে বনজুড়ে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন প্রযাতির পশু পাখিদের অভয়ারণ্য। বর্তমানে ভ্রমণ পিপাসুরাও ছুটে আসছেন এখানকার মনোরম প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে। প্রকৃতিপ্রেমীদের মতে এ বনকে যথাযথ ভাবে সংরক্ষণ করলে এখানে রয়েছে অপার সম্ভাবনা।

চিত্রা পাড়ের বন সম্পর্কে কথা হয় স্থানীয়দের সাথে। তারা জানান, চিত্রা নদীর চরে ২০/২২ বছর ধরে প্রাকৃতিকভাবে এ গাছপালা জন্মেছে  বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর থেকে এ বনের পরিচিতি দেশব্যাপি ছড়িয়ে পড়ে। বাড়তে থাকে লোক সমাগম।

সুন্দরী, কেওড়া, গরান, গোলপাতাসহ প্র্যায় অর্ধশত প্রজাতির গাছের দেখা মিলেছে এই মিনি সুন্দরবনে। মেছো বাঘ, বাঘডাসা, খাটাশ, বনবিড়াল, সারেল, বিষধর সাপ, তক্ষক, কচ্ছপ, গুঁইসাপসহ বিভিন্ন প্রজাতির উভচর ও সরিসৃপ প্রাণির অবাধ বিচরণভূমি এ বন ঘিরে। মাছরাঙা, ঘুঘু, শালিক, দোয়েল, টুনটুনি, বকসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির আবাসস্থলও এখানকার গাছপালা।  প্রতিদিনই প্রায় শত শত লোক এসে ভিড় জমাচ্ছে এখানে। সন্ধ্যার নামার সাথে সাথে পশু পাখিদের কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে বনের চারিপাশ। মনোরম দৃশ্য দেখার জন্য অনেকে ছুটে আসে দূর দুরান্ত থেকে। 

চিতলমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বাবু অশোক কুমার বড়াল বলেন, চিতলমারী সদর ইউনিয়নের সীমান্ত ঘেঁষা চিত্রা নদীর প্রাকৃতিকভাবে এ গাছপালা জন্মেছেপাট ডুমুরিয়া গ্রামের ডাঃহরেনদ্রনাথ বাড়ৈ , খিলিগাতী গ্রামের পাখিপ্রেমী আশিষ মন্ডলসহ অনেকে জানান, প্রতিদিন এখানকার বনে পাখি দেখতে প্রতিদিনই প্রায় শত শত লোক ছুটে আসে। এখানকার পাখিদের নিরাপত্তা ও বনটি সংরক্ষণ করতে পারলে পর্যাটন শিল্পে অপার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

প্রাণি ও পাখি বিশেষজ্ঞ শরীফ খানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, সুন্দরবনের আয়োতন দিন দিন কমে আসছে। এমতো অবস্থায় চিত্রাপাড়ে নতুন এ বনটি ঘিরে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। এখানকার বন্যপ্রাণি ও পাখিদের রক্ষার জন্য সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মারুফুল আলম জানান, বনটি তিনি শীঘ্রই পরিদর্শন করবেন। বনের প্রাণি ও পাখিদের রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।