কৃত্রিম বৃষ্টিপাত বা ক্লাউড সিডিং কী?

গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণের ফলে সৃষ্ট বন্যায় ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার অধিকাংশ এলাকা এখন থৈ থৈ। বন্যায় এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৪৩ জন। পরিস্থিতি সামলানোর কৌশল হিসেবে ভারী বৃষ্টিপাত রোধের চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ, সহায়তা নেয়া হচ্ছে ‘ক্লাউড সিডিং’ পদ্ধতির। এ পদ্ধতিতে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানো হয়। অর্থাৎ মেঘ জাকার্তা পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই ক্লাউড সিডিং প্রযুক্তি প্রয়োগ করে বৃষ্টি ঝরানো হবে। ফলে জাকার্তায় আর ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা থাকবে না।

কৃত্রিম বৃষ্টিপাত হলো প্রকৃতির ওপর বৈজ্ঞানিক প্রভাব খাটিয়ে সংঘটিত জোর করে বৃষ্টি নামানো! এ জন্যে প্রথমে মেঘ সৃষ্টি করতে হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে এই মেঘকে ঘনীভূত করে বৃষ্টিপাতের উপযোগী অবস্থায় নিয়ে আসতে হয় এবং সবশেষে বৃষ্টি ঝরানো হয়। তবে সচরাচর আকাশে ভাসমান মেঘকে পানির ফোঁটায় পরিণত করেই কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানো হয়।

ক্লাউড সিডিংয়ে সাধারণ রাসায়নিক যেমন সিলভার আয়োডাইড, পটাশিয়াম আয়োডাইড অথবা শুষ্ক বরফ বা কঠিন কার্বন ডাই অক্সাইড ব্যবহার করা হয়। তরল প্রোপেন গ্যাসও ব্যবহার করা হয়। এ গ্যাস সিলভার আয়োডাইডের চেয়ে বেশি তাপমাত্রায় বরফের স্ফটিক তৈরি করতে পারে। তবে অনেক সস্তা ও বেশ কার্যকর প্রমাণিত হওয়ায় এ কাজে এখন সোডিয়াম ক্লোরাইড বা খাবার লবণের ব্যবহার বাড়ছে। ক্লাউড সিডিংয়ের সময় মেঘের ভেতরের তাপমাত্রা -২০ থেকে -৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসেন তখন তুষারপাত বেড়ে যেতে পারে। এরকম পরিস্থিতিতে সিলভার আয়োডাইডের মতো রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়।

ক্লাউড সিডিংয়ের উপাদানগুলো উপযুক্ত স্থানে উড়োজাহাজে করে অথবা বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়। মেঘের ভেতর দিয়ে যখন উড়োজাহাজটি যায় তখন সিলভার আয়োডাইড ছড়িয়ে দেয়া হয়। এ রাসায়নিকের ক্ষুদ্র স্ফটিকদানাগুলোই মেঘের সিড হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ এসব দানায় ভাসমান জলীয়বাষ্পে পানি কণাগুলো জড়ো হয়ে বড় ফোঁটায় পরিণত হয়। একসময় ওজন বেড়ে গিয়ে মহাকর্ষের টানে বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে।
 
কৃত্রিম বৃষ্টিপাত কি ও এর আবিষ্কারক:
আকাশে ভেসে থাকা বৃষ্টির অনুপযোগী মেঘগুলোকে জোরপূর্বক মাটিতে নামিয়ে আনাই হলো মূলত কৃত্রিম বৃষ্টিপাত। ১৯৪৬ সালে ভিনসেন্ট সেইফার সর্বপ্রথম কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের মূলনীতি আবিষ্কার করেন। এবং ওই বছরের ১৩ই নভেম্বর আরেক নোবেলবিজয়ী বিজ্ঞানী ল্যাংমুর কে সাথে নিয়ে পরীক্ষামূলক ভাবে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটাতে সফল হোন।

ক্লাউড সিডিং কিভাবে ঘটে?
মূলত রেফ্রিজারেটরের মূলনীতি ব্যবহার করেই কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানো হয়। বৃষ্টির অনুপযোগী মেঘগুলো বৃষ্টি হয়ে মাটিতে ঝরে পড়ার জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত ঘনীভবন। আর এ ঘনীভবনে ব্যবহার করা ড্রাই আইস অথবা সিলভার আয়োডাইড। ড্রাই আইসের তাপমাত্রা মাইনাস-৭৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়ে থাকে। ট্রপোস্ফিয়ার স্তরে ভেসে থাকা মেঘের উপর এই ড্রাই আইসের গুড়া ছড়িয়ে দিলেই সেটা ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টি হয়ে মাটিতে পড়ে।

ড্রাই আইস বিমানে বা রকেটে করে মেঘের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে বর্তমানে মিসাইল পদ্ধতি অধিক জনপ্রিয়।

ক্লাউড সিডিং এর উপকারিতা কী/কেন প্রয়োজন?
বিশ্বের সব দেশ মিলিয়ে যতবার কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটিয়েছে, চীন একাই তার চেয়ে বেশি ঘটিয়েছে। ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিক গেমসে প্রবল বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানান আবহাওয়াবিদরা। চীনের বিজ্ঞানীরা অলিম্পিক শুরু হওয়ার কয়েকদিন আগেই প্রচুর কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে সেই আশঙ্কা নাকচ করে দিয়েছিলো।

ভারত অবশ্য চীনকে বৃষ্টিচোর বলে। কারণ ভারতে খড়া বৃদ্ধির কয়েকটা কারণের মধ্যে চীনের অধিক কৃত্রিম বৃষ্টিপাতকেও দায়ী করা হয়।

ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় এ বছরের জানুয়ারীতে প্রবল বৃটিপাতের ফলে প্রথম ৩ দিনেই প্রাণ হারায় ৪৩জন ৷ আবহাওয়াবিদরা বলেন দু’সপ্তাহ চলবে এ বৃষ্টিপাত। পরে বিজ্ঞানীরা মেঘগুলো জাকার্তায় পৌঁছানোর আগেই নদীর উপর কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে শতশত মানুষের প্রাণ রক্ষা করে।

ক্লাউড সিডিং এখন বিশ্বের অনেক দেশেই ঘটানো হচ্ছে। বলাবাহুল্য এ প্রযুক্তি অনেক ব্যয়বহুলও বটে ৷ এজন্য বিজ্ঞানীরা লেজার প্রযুক্তির মাধ্যমে বৃষ্টিপাত ঘটানোর প্রক্রিয়া আবিষ্কারের চেষ্টা করছে।

সূত্র: উইকিপিডিয়া, ইন্টারনেট।