অশনির কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার

▌নিজস্ব প্রতিনিধি

ধেঁয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ এমন খবর জানার পর আতংকিত হয়ে পড়েছে সাতক্ষীরার উপকূলবাসী। দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় অশনির কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠছে। এটি রাতেই রূপ নেবে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে। ভারতের আবহাওয়া অফিস বলছে, রাতে এর গতি ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে। দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও কাছাকাছি এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’তে রূপ নিয়েছে। দেশের সব সমুদ্রবন্দরগুলোকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত নামিয়ে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

রবিবার (৮ মে) বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। সোমবারও (০৯ মে) একই অবস্থা বিরাজ করবে।

সাতক্ষীরার উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগরে বেঁড়ীবাঁধের ২২টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ২০০৯ সালের আইলার পর ২০১৩ সালের ঘূর্ণিঝড় মহাসেন, ২০১৫ সালের ঘূর্ণিঝড় কোমেন, ২০১৬ সালে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু, ২০১৭ সালে ঘূর্ণিঝড় মোরা, ২০১৯ সালে ঘূর্ণিঝড় ফণি, ২০১৯ সালে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল, ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্পান ২০২১ সালে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তান্ডব কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই এবছরও ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’র খবরে শঙ্কায় রয়েছে স্থানীয়রা। প্রতিবছর সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চলে বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ে এমন ধরণের দূর্যোগ হতে দেখা যায়।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূলীয় অঞ্চলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৪৯ কিলোমিটার বেঁড়ীবাঁধের ৪৩ টি স্থান ঝুঁকিপূর্ন থাকার পর জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি (জাইকা) প্রকল্প বেঁড়ীবাঁধের ২১টি স্থানের ৯০% কাজ ইতি মধ্যে শেষ করেছে। শ্যামনগর উপকূলীয় অঞ্চলের বাকি ২২টি ঝুঁকিপূর্ণ বেঁড়ীবাঁধের মধ্যে কাশিমাড়ী ইউনিয়নে ১টি, আটুলিয়ায় ইউনিয়নে ১টি গাবুরা ইউনিয়নে ৭টি, বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নে ৫টি, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নে ৩টি, রমজাননগর ইউনিয়নে ৩টি, কৈখালী ইউনিয়নে ৩টি ধাপে কাজ করবে।

তবে এর মধ্যে সব থেকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের ১টি স্থান দূর্গাবাটী বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তৃপক্ষ। এ দিকে ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’র সর্তক সংকেত বিষয় শুনে উপকূলবাসীরা অতংকিত হয়ে পড়েছে। ২০০৯ সালের পর একেধারে প্রতিবছর এই সব প্রাকৃতিক দূর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো এখনো সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারিনি। সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগীতা পেলেও তা ক্ষতির সংখ্যা কুলিয়ে উঠে না। বিশেষ করে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকে নদীর চরে বসাবসকারীরা। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’র পূর্ববর্তীতে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন বলে জানান।

এতে বলা হয়, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’-তে পরিণত হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি রোববার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ২৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ১৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ২০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।

রবিবার (৮ মে) বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত নামিয়ে এর পরিবর্তে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে নিষেধ করেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।

ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রোববার সন্ধ্যার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি আরও শক্তিশালী হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। আগামী ১০ মে ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ ও উড়িষ্যা উপকূলের কাছাকাছি চলে যেতে পারে। এরপর এটি উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে বাঁক নিতে পারে। এরপর তা উড়িষ্যা উপকূলের দিকে যেতে পারে।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) অধীন জাতিসংঘের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগর তীরের ১২ দেশের (বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভারত, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ওমান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান, সৌদি আরব ও ইয়েমেন) আবহাওয়াবিদদের সংস্থা এস্কেপ ঘূর্ণিঝড়ের নাম দিয়ে থাকে। ‘অশনি’ নামটি শ্রীলঙ্কার দেওয়া, এর অর্থ ক্রোধ বা ক্ষ্যাপাটে।

২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেতের মানে হচ্ছে, দূরে গভীর সাগরে একটি ঝড় সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। বন্দর এখনই ঝড়ে কবলিত হবে না, তবে বন্দর ত্যাগকারী জাহাজ পথিমধ্যে বিপদে পড়তে পারে।
 █