ইকবাল কবির:

সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের পাশে স্বামীবাগ প্রধান সড়কে রুমী গ্লাস হাউজ।এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় এই গ্লাস হাউজে ততকালীন বিরোধী দলের বহু লিয়াজো কমিটির সভা হতো এই দোকানে।সকল গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিএনপি নেতা মাজিদুল হক তার ভাগ্নের এই দোকানকে নিরাপদ স্থান হিসেবে বেছে নিতেন।শুধু মাত্র সভায় আগত নেতারা আর তার ভাগ্নে ছাড়া কেউ জানতো না।

আজকের সাবেক তথ্য মন্ত্রী আহসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, টিপু বিশ্বাস সহ অনেক নেতাই এরশাদ বিরোধী কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচী ঠিক করতেন এই গ্লাস হাউজে বসেই। মাজিদুল হকের ভাগ্নে দোকানের সার্টার ফেলে দিয়ে বাহিরে বসে থাকতেন।আমি বিষয়টি জানতাম মাজিদুল হকের ভাগ্নের সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক থাকার কারনে। পাশেই একটি ফটো স্টুডিও। দুপুর গড়িয়ে বিকাল। সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়েছে। তখন ঢাকায় এতো উচু ভবন তৈরী হয়নি। স্টুডিওটির সামনেই সূর্যের আলো। রুমী গ্লাস হাউজের সারি সারি দাড় করানো বেলজিয়ামের মোটা গ্লাসগুলোতে রিফ্লেক্ট করছে। 

চারপাশেই সাদা পোশাকের তরুণ ও মধ্য বয়সের কয়েক ব্যক্তি নজরদারি করছে কখনো রুমি গ্লাস হাউজের আবার কখনো স্টুডিওটির ওপর।আমি ভেবে ছিলাম রুমি গ্লাস হাউজে সভার খবর ফাস হলো কিনা।মাজিদুল হকের ভাগ্নে জানালো না আজ কোন সভা নাই।তবে টিকটিকিরা নজরদারী করছে ফটো স্টুডিও টার্গেট করে।এসি আকরাম চাচাকে তখনও আমি দেখিনি।আমিও বিষয়টি উপভোগ করছিলাম।কারন আমি তখন নিউজ ম্যাগাজিন সাপ্তিহক রিপোর্টারে স্পোর্টস ও ক্রীইম বিষয়ে কাজ করি।এর মধ্যে এক সুন্দরী তরুণী বেশ সাজুগুজু করা, সঙ্গে এক তরুণ। পরনে ব্লু রংএর জিন্সের প্যান্ট, গায়ে থাইল্যান্ডের কলার ওয়ালা ক্রীম রং এর গেন্জি। পায়ে কেডস।বেশ স্মার্ট তরুণ - তরুণী যুগল বেশ হাস্যোউজ্জলভাবেই কথা বলতে বলতে ফটো স্টুডিওতে ঢুকলো। ওই জামানায় তরুণ-তরুণীর এক ফ্রেমে ছবি তোলার একটা সংস্কৃতি ছিলো। স্টুডিওর রিসিপশনে বসা লোকটি অভ্যর্থনা জানিয়ে তাদের দুজনকে ভেতরের রুমটিতে বসিয়ে দরজাটি বন্ধ করে আবার তার আসনে এসে বসলেন। 

দূর থেকেই তা পর্যবেক্ষণ লোকগুলো দ্রুত একত্রিত হয়েই স্টুডিওতে ঢুকে পরলেন। সবাই কোমর থেকে অস্ত্র উঁচিয়ে নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তরুণীর সঙ্গে থাকা ছেলেটিকে কোন নড়াচড়া করারও সুযোগ না দিয়ে দুই হাত পিচ মোড়া করে চোখে রুমাল বেঁধে স্টুডিও থেকে বের করে নিয়ে আসলেন। দুপুরের পর থেকেই এই স্টুডিওর চারপাশে অবস্থান নেয়া গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যদের চোখেমুখে আনন্দের ঢেউ বইছে।এসি আকরাম চাচা কেও দেখলাম কিন্তু কিছু জিজ্ঞেস করার পরিস্থিতি ছিলোনা। যে শিকারের অপেক্ষায় ফাঁদ পেতে স্টুডিওর চারপাশে ওৎপেতে ছিলেন তার সফল সমাপ্তি ঘটলো তরুণীর সঙ্গে থাকা স্মার্ট ছেলেটিকে আটকের মাধ্যমে। এতোক্ষণ যে তরুণকে আটকের বর্ণনা দিচ্ছিলাম তিনি হলেন, পুরান ঢাকার সন্ত্রাসী বুদ্দু। ছিনতাই, ডাকাতি, খুনসহ বহু অপরাধের অভিযোগে ১৯৮৫ সালের মার্চ মাসে কোন এক বিকেলে প্রেমিকার সাথে স্টুডিওতে ছবি তুলতে আসা অপ্রস্তুত বুদ্দুকে আটকের মধ্যে এসি আকরাম হোসাইনের আরেকটি সফল অভিযানের সমাপ্তি ঘটে। 

গাড়ি উঠার আগমূহর্তে এসি আকরাম জানালেন, তার কাছে আগেই খবর ছিলো সন্ত্রাসী বুদ্দু তার বান্ধবীকে নিয়ে দুপুরের পর এই স্টুডিওতে ছবি তুলতে আসবে। সোর্সের পাক্কা খবরে নিশ্চিত হয়ে এই অভিযানের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিলো। পরে ডিবি অফিসে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে বুদ্দু ঢাকায় ছিনতাই, খুনসহ বহু অপরাধের বর্ণনা দেন। সায়েদাবাদ এলাকায় সে ছিলো ছিনতাইয়ের সম্রাট। রাতে বাস যাত্রীদের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে কেড়ে নিতো সব।ঘটনার সময় আমি নিজেও উপস্থিত ছিলাম রুমি গ্লাস হাউজে।পরে এসি আকরাম হোসেন জানালেন,রাতে ডিবি অফিসে আসো আংকেল বিস্তারিত জানাবো।