প্রায় অর্ধ কোটি টাকার মূল্যমানের জাল নোটসহ জাল নোট তৈরি চক্রের অন্যতম হোতা মোহাম্মাদ আমিনুল হক দুলালসহ চক্রের ০৪ জনকে রাজধানীর ডেমরা, খিলগাঁও ও সবুজবাগ থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০; জাল নোট তৈরীর সরঞ্জামাদি উদ্ধার। 

১। এলিট ফোর্স হিসেবে র‌্যাব আত্মপ্রকাশের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আইনের শাসন সমুন্নত রেখে দেশের সকল নাগরিকের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার লক্ষে অপরাধ চিহ্নিতকরণ, প্রতিরোধ, শান্তি ও জনশৃংখলা রক্ষায় কাজ করে আসছে। জঙ্গিবাদ, খুন, ধর্ষণ, নাশকতা এবং প্রতারণাসহ বিভিন্ন ধরণের অপরাধী চক্রের সাথে সম্পৃক্ত অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র‌্যাব সদা সচেষ্ট রয়েছে। এছাড়াও র‌্যাব বিভিন্ন সময়ে জাল নোট তৈরী ও বিক্রয়কারী চক্রকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে এসে জনগণের সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। 

২। সাম্প্রতিক সময়ে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব জানতে পারে যে, একটি প্রতারক চক্র প্রায় এক বছর যাবৎ জাল নোট তৈরি করে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করে আসছে। এই চক্রটি জাল নোটের ব্যবসা করে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। র‌্যাব উক্ত প্রতারক চক্রের সদস্যদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। 


৩। এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর ডেমরা, সবুজবাগ ও খিলগাঁও এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে জাল নোট তৈরী চক্রের অন্যতম হোতা ১। মোহাম্মদ আমিনুল হক দুলাল (৪৩), পিতাঃ মোঃ ফজলুল হক, তিতাস, কুমিল্লা, তার সহযোগী ২। আব্দুর রাজ্জাক দিদার (৩০), পিতাঃ মোঃ সিদ্দিকুর রহমান, ভোলা, ৩। মোঃ সুজন আলী (৪০), পিতাঃ মোঃ মুসলিম উদ্দিন, রানিশংকৈল, ঠাকুরগাঁও এবং ৪। মোহাম্মদ সাকিবুল হাসান (২১), পিতাঃ মোঃ নুরনবী, সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ’দেরকে গ্রেফতার করে। এসময় গ্রেফতারকৃত আসামিদের নিকট হতে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার মূল্যমানের জাল নোট (যার মধ্যে ১০০০, ৫০০ ও ১০০ টাকা সমমানের জাল নোট রয়েছে), ০১টি ল্যাপটপ, ০১টি প্রিন্টার, ১১টি টোনার ও কার্টিজ, ০১টি পেনড্রাইভসহ জালনোট তৈরির বিপুল পরিমান সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জাল নোট তৈরি ও বিক্রয় সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য প্রদান করে। 

৪। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরা পরষ্পর যোগসাজশে প্রায় ০১ বছর যাবৎ জাল নোট তৈরি করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতারণার মাধ্যমে জাল নোট বিক্রি করে অর্থ হাতিয়ে নেয়। গ্রেফতারকৃরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন পেইজ ও গ্রæপ থেকে জাল নোট তৈরি ও ব্যবসার প্রতি আকৃষ্ট হয়। চক্রের মূল হোতা গ্রেফতারকৃত আমিনুল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি গ্রপের মাধ্যমে গ্রেফতারকৃত অপর সদস্যদের সাথে তার পরিচয় হয়। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত আমিনুল এর নেতৃত্বে কম সময়ে অল্প পুঁজিতে অধিক লাভের আশায় তারা জাল নোটের ব্যবসা করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রথমে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি মেসেঞ্জার গ্রæপ খুলে এবং সেখানে তারা জাল নোট তৈরি/ব্যবসার বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদান করে। এই মেসেঞ্জার গ্রæপের এ্যাডমিন হিসেবে দিদার কাজ করত বলে জানা যায়। 

৫। জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, গ্রেফতারকৃত আমিনুল জাল নোট তৈরির সার্বিক বিষয়ে দক্ষ হওয়ায় সে নিজেই এই চক্রটি পরিচালনা করত এবং সে নিজে ল্যাপটপ, প্রিন্টার, পেনড্রাইভ, কাগজ, টিস্যু পেপার ও প্রিন্টারের কালিসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি ক্রয় করে। গ্রেফতারকৃত আমিনুল জাল নোট প্রিন্টিং করে গ্রেফতারকৃত দিদারকে প্রদান করতো এবং গ্রেফতারকৃত দিদার চক্রের অপর সদস্য গ্রেফতারকৃত সুজনকে সাথে নিয়ে জাল নোট কাটিং ও বান্ডিল করত বলে জানা যায়। যখন জাল নোটের ব্যবসা রমরমা থাকে তখন চক্রটি দৈনিক ২-৩ লক্ষাধিক টাকা মূল্যমানের জাল নোট তৈরি করত বলে জানা যায়। মূলত তারা একটি অভিনব কায়দায় জাল নোটগুলো বিক্রয় করত। তারা তাদের ফেইসবুক গ্রপ হতে কমেন্ট দেখে তাদের সাথে মেসেঞ্জারে চ্যাটিং এর মাধ্যমে ক্লায়েন্ট তৈরি করে অগ্রীম টাকা নিয়ে নিত এবং পরবর্তীতে তাদের সুবিধাজনক স্থানে জাল নোটগুলো সরবরাহ করতো। উক্ত চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও মুন্সিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় তৈরিকৃত জাল নোট সরবরাহ করত। তারা প্রতি ০১ লক্ষ টাকা মূল্যের জাল নোট ২০-২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করত। চক্রটি মাছ বাজার, লঞ্চ ঘাট, বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন মার্কেটে নানান কৌশল অবলম্বন করে জাল নোট সরবরাহ করত বলে জানা যায়। এছাড়াও তারা অধিক জন-সমাগম অনুষ্ঠান বিশেষ করে বিভিন্ন মেলা, উৎসব, পূজা ও কোরবানীর পশুর হাট উপলক্ষে বিপুল পরিমান জাল নোট ছাপিয়ে ছিল বলে তথ্য প্রদান করে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে জালনোট প্রিন্টিং এর সময় কাগজের অব্যবহৃত ও নষ্ট অংশগুলো পুড়িয় ফেলত। এ পর্যন্ত চক্রটি বিভিন্ন সময়ে প্রায় ০২ কোটি মূল্যমানের জাল নোটের ব্যবসা করেছে বলে জানা যায়। 

৬। গ্রেফতারকৃত আমিনুল রাজধানীর একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে ডিজাইনার হিসেবে এর কাজ করতো। উক্ত পেশার আড়ালে সে অনলাইনে জাল নোট তৈরির সার্বিক বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে। পরবর্তীতে সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন গ্রপের মাধ্যমে তার অন্যান্য সহযোগীদের সাথে পরিচয় হলে কম সময়ে অল্প পুঁজিতে অধিক লাভের আশায় তাদের সাথে জাল নোট তৈরি ও সরবরাহের একটি চক্র গড়ে তোলে। অতঃপর আমিনুল জাল নোট তৈরির সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করে এবং সে নিজে জাল নোট ডিজাইন এবং প্রিন্টিং এর কাজ করত। আমিনুল প্রায় এক বছর যাবৎ চক্রটি পরিচালনা করে আসছিল। 

৭। গ্রেফতারকৃত আব্দুর রাজ্জাক দিদার হিসাব বিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকত্তোর সম্পন্ন করে নিজস্ব গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করে। পরবর্তীতে ২০২১ সালে গার্মেন্টস ব্যবসায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হওয়ায় সে স্বল্প সময়ে অধিক লাভের আশায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “জাল নোট বিক্রি করি, জাল টাকা সেল, জাল টাকা বেচি”সহ বিভিন্ন জাল নোট ক্রয়-বিক্রয়ের পেইজ ও গ্রপে নিজেকে যুক্ত করে। সে চক্রের মূলহোত