শিরোনাম

6/recent/ticker-posts

‘চিরকুট’ লিখে ঢাবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিজয় একাত্তর হলের ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে এক শিক্ষার্থী। বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) ভোর রাত পৌঁনে ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। তবে কী কারণে আত্মহত্যা করেছে তা জানা যায়নি।

নিহত শিক্ষার্থীর নাম কাজী ফিরোজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ২০৩ নম্বর রুমে থাকতেন। সেই হলেরই আবাসিক ছাত্র ছিলেন। চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি গোপালগঞ্জে।

বিজয় একাত্তর হলের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, বিজয় একাত্তর হলের যমুনা ব্লকে রাত পৌঁনে একটার দিকে হঠাৎ করে কিছু পড়ার শব্দ শুনতে পায় শিক্ষার্থীরা। ধারণা করা হচ্ছে তিনি ছয় কিংবা সাত তলা থেকে পড়ে যান।

ফিরোজের একটি খাতায় লেখা ছিল, "মানুষ বাঁচে তার সম্মানে। আজ মানুষের সামনে আমার যেহেতু সম্মান নাই, এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আমার কোনো অধিকার নাই। আমার মৃত্যুর দায়ভার একান্ত আমার। সরি মা! বাড়ি থেকে তোমাকে দিয়ে আসা কথা রাখতে পারলাম না। আমার জীবন নিয়ে হতাশ।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাজী ফিরোজের সঙ্গে একই বিভাগের শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৯-২০ সেশনের বঙ্গমাতা হলের সেই শিক্ষার্থীর সাথে দীর্ঘদিন ধরেই সম্পর্ক ছিলো।

সাম্প্রতিক সময়ে তাদের সম্পর্কে অবনতি ঘটে। এরপর ছেলের বান্ধবী বুঝাতে গত শুক্রবার গোপালগঞ্জ থেকে তার মা, ছোট ভাই এবং আর এক চাচাতো ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। কিন্তু ওই মেয়ে কারও ফোন রিসিভ করেননি। কেউ ফোন দিয়ে ফিরোজের পরিচয় দিলেই তাকে ব্লক করে দিতেন। এরপর ফিরোজের মা অনেকটা হতাশ হয়ে গ্রামে ফিরে যান। গ্রামে ফিরে গিয়ে ফিরোজের মা অন্য নম্বর দিয়ে পুনরায় ফোন দেন। ফোন ধরে ফিরোজের মায়ের পরিচয় পেয়ে ওই শিক্ষার্থী পুনরায় ফোন কেটে দিয়ে ওই নম্বরও ব্লক কের দেন। এতে ফিরোজ মনে করেন তার মাকে অপমান করা হয়েছে। এর জেরেই ফিরোজ আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছেন তার সহপাঠীরা।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক ফিরোজের এক সহপাঠী আমার সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের সাজেক ট্যুরে যাওয়ার প্ল্যান ছিলো। সাথে ওই মেয়েরও যাওয়ার কথা ছিলো। তখন আমরা ওদের বলি যে, তোমাদের সম্পর্কতো বৈধ নয়। তাহলে তোমাদের নিয়ে যাওয়া যাবে না। এরপর ওরা বিয়ে করে- গত কয়েকদিন আগে ফিরোজ আমাকে একটা কোর্টম্যারেজের পেপার দেখায়। এরপর আমি বলি এবার তোমাদের নিয়ে যাওয়া যাবে। এরই মধ্যে ওদের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। মেয়ে একটা পারিবারিক কারণ দেখিয়ে সাময়িক সময়ের জন্য সম্পর্ক ছিন্ন করতে চায়। কিন্তু ফিরোজ বলে তোমার ভালো খারাপ সব সময়েই আমি থাকতে চাই। কিন্তু মেয়ে চেয়েছিল সাময়িক সময়ের জন্য সম্পর্ক ছিন্ন। এতে ফিরোজ অনেক বেশি হতাশ হয়ে পড়ছিল।

ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিষয়টি ফিরোজের পরিবারও জানত। তাই ছেলের বান্ধবীকে বুঝাতে ফিরোজের মা ঢাকায় আসেন। আমিও ওই মেয়ের সঙ্গে কথা বলেছি, বুঝানোর ট্রাই করেছি কিন্তু তাতে কোন লাভ হয় নাই।’

ফিরোজের এই সহপাঠী আরও বলেন, গত মঙ্গলবারও আমরা একসাথে ক্লাস করেছি। রাতে আড্ডা দিয়েছি। ও আমার কাছ থেকে পরেরদিনের পড়ার নোট নিয়েছে। এরপর আত্মহত্যা করল। আমরা কেউই বুঝতে পারি নাই যে ও এই কাজ করবে।