রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনে দুই নারী, এক শিশুসহ অন্তত চারজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাত নয়টার দিকে চলন্ত ট্রেনটিতে দুর্বৃত্তরা আগুন দেয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে ও ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, যশোরের বেনাপোল থেকে ট্রেনটি ঢাকায় আসছিল। সায়েদাবাদ এলাকা অতিক্রম করার সময় ওই ট্রেনে আগুন দেওয়া হয়। ট্রেনটি কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছার কিছুক্ষণ আগে গোপীবাগ এলাকায় থামানো হয়। আগুনে ট্রেনটির তিনটি কোচ পুড়ে গেছে।
রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনে পুড়তে থাকা একটি বগিতে দেখা যায়, জানালা দিয়ে দুই হাত আর মাথা বাইরে বের করে আছেন এক ব্যক্তি। আর জানালাটা অর্ধেক খোলা। ওভাবেই পুড়ে যাচ্ছে তার শরীর। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে ছবিটি।
জানা যায়, সেই ব্যক্তিকে উদ্ধারের চেষ্টা করেছিলেন স্থানীয়রা। কিন্তু বের হতে রাজি হননি তিনি। আগুনে সামান্য দগ্ধ হয়ে বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি ট্রেনটির যাত্রী নাফিজ আলম (২২) নামে এক যুবক বলেন, আগুন লাগার পর আমার সিটের পাশের জানলা দিয়ে বের হতে পারিনি। তখন পেছনের সিটের জানালা দিয়ে লাফ দেই। বাইরে বের হওয়ার পর দেখি পাশের জানালায় অর্ধেক শরীর বের হওয়া ওই ব্যক্তি। তখন তার হাত ধরে টেনে বাইরে বের করা চেষ্টা করি। ততক্ষণে তার শরীরের নিচেরদিকে আগুন ধরে গেছে। কিন্তু তিনি বারবার বলছিলেন, ‘আমার বাচ্চাটা মারা গেছে। আমি আর বাঁচবো না। আমারে বের করতে হইবো না। ’ এদিকে আগুন দ্রুতই বাড়তে থাকায় তাকে আর বের করা সম্ভব হয়নি।
‘আব্বু যাচ্ছি, দেড় ঘণ্টার মতো লাগবে। ঢাকায় পৌঁছে তোমাকে ফোন দেব।’—গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে থাকা ছেলের সঙ্গে এমন কথা হয়েছিল বাবার। এরপর ট্রেনে আগুন লাগার খবর পান তিনি। এর পর থেকে আর ছেলেকে খুঁজে পাচ্ছেন না।
ট্রেনে আগুন লাগার খবর শুনে গতকাল রাতেই ঢাকায় আসেন বেসরকারি একটি ওষুধ প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী ষাটোর্ধ্ব আবদুল হক। মুঠোফোনে থাকা ছেলের ছবি নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছোটাছুটি করছেন এই বাবা।
রাজধানীর ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের ফার্মাসি বিভাগের শিক্ষার্থী চন্দ্রিমা চৌধুরী (২৮)। শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) বেনাপোল এক্সপ্রেসে রাজবাড়ী থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন তিনি। সবশেষ ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ১৫ থেকে ২০ মিনিট আগেও কথা হয় তার বড় ভাইয়ের সঙ্গে। তারপর থেকেই আর খোঁজ মিলছে না চন্দ্রিমার।
ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশ্যে বেনাপোল এক্সপ্রেসে উঠেন চন্দ্রিমা। এরপর বেশ কয়েকবার পরিবারের সঙ্গে কথা হয়। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর থেকে তার ফোন বন্ধ আছে, তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।