‘হাজরে আসওয়াদ’ বা কালো পাথর একটি প্রাগৈতিহাসিক ইসলামি নিদর্শন এবং বেহেশতের বহু মূল্যবান বরকতময় উপকরণ। এটি পবিত্র কাবাগৃহের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে প্রায় চার ফুট উঁচু দেয়ালের কিছুটা ভেতরে পোঁতা কালো থালার মতো একটি গোল পাথর। কালো বর্ণের বলে এর নাম রাখা হয়েছে হাজরে আসওয়াদ। কিন্তু এটা প্রথমে কালো ছিল না; এর রং সম্পূর্ণ সাদা ছিল। ক্রমান্বয়ে এর মাথার রংটুকু কালো হয়ে গেছে; তা-ও হঠাৎ করে নয়। বরং আস্তে আস্তে দীর্ঘদিন ধরে কালো হয়েছে। আদম সন্তানের গুনাহ পাথরটিকে কালো করে দিয়েছে। মূলত হাজরে আসওয়াদ ছিল রুপার মতো ধবধবে সাদা বেহেশতের একটি ইয়াকুত পাথর। কোনো এক দুর্ঘটনায় তা কয়েকটি টুকরো হয়ে গিয়েছিল। এ টুকরোগুলো মূল্যবান ধাতুর সাহায্যে জোড়া দিয়ে একত্র করা হয়েছে। একটি চাঁদির পাত্রে কাবাগৃহের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে দেয়ালের সঙ্গে এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে।
ইসলাম ধর্মের সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবি ও রাসুল হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ হাতে কাবা শরিফে এ পাথরটি স্থাপন করেন। এটি কাবা শরিফের দক্ষিণ পূর্ব কোনে স্থাপিত। ওমরাহ ও হজ পালনকারীরা এ কোন থেকে তাওয়াফ শুরু করেন।
হাজরে আসওয়াদ চুম্বনের ফজিলত
হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করা বরকতময়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন এ পাথর আবু কুবাইস পাহাড় থেকে বড় আকার ধারণ করে উপস্থিত হবে। তার একটি জিহ্বা ও দুটি ঠোঁট থাকবে, (বায়তুল্লাহর জিয়ারতকারীরা) কে কোন নিয়তে তাকে চুম্বন করেছে, সে সম্পর্কে বক্তব্য দেবে। ’ (ইবনে খুজায়মা : ৪/২২১, মুসতাদরাকে হাকেম : ১/৪৫৭)
আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা.)-এর শাসনামলে হাজরে আসওয়াদ ভেঙে তিন টুকরো হয়ে গিয়েছিল। ফলে তিনি তা রুপা দিয়ে বাঁধাই করেছেন। আর তিনিই সর্বপ্রথম হাজরে আসওয়াদকে রুপা দিয়ে বাঁধানোর সৌভাগ্য অর্জনকারী।
• ১৭৯ হিজরিতে আব্বাসীয় খলিফা হারুনুর রশিদ হাজরে আসওয়াদকে হীরা দিয়ে ছিদ্র করে রুপা দিয়ে ঢালাই করেন।
• ৩১৭ হিজরিতে কারামতিয়ারা হারাম শরিফে অতর্কিত আক্রমণ করে হাজরে আসওয়াদ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরে ৩৩২ হিজরিতে ফিরিয়ে এনে চুনা দিয়ে তার চারপাশ এঁটে দেওয়া হয়।
• ৪১৩ হিজরিতে এক নাস্তিক লৌহ শলাকা দ্বারা হাজরে আসওয়াদের ওপর হামলে পড়ে। ফলে তা ছিদ্র হয়ে যায়। এরপর বনি শায়বার কিছু লোক তার ভগ্নাংশগুলো একত্রিত করে কস্তুরী দ্বারা ধৌত করে তার টুকরোগুলো ফের জোড়া লাগিয়ে দেয়।
• ১৩৩১ হিজরিতে সুলতান মুহাম্মদ রাশাদ হাজরে আসওয়াদের চারপাশে রুপার একটি নতুন বেষ্টনী তৈরি করে দেন।
• ১৩৫১ হিজরির এপ্রিলের ১৮ তারিখে বাদশাহ আবদুল আজিজ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও আলেম-ওলামাসহ কাবা শরিফে উপস্থিত হন এবং হাজরে আসওয়াদের অবস্থান সুদৃঢ় করার জন্য তাতে মেশকে আম্বরের মতো মূল্যবান পাথর সংযুক্ত করেন।
• ১৪১৭ হিজরিতে পবিত্র কাবাঘরের সঙ্গে হাজরে আসওয়াদেও বিশেষ রুপার দ্বারা নতুন বেষ্টনী স্থাপিত হয়।