রাবি প্রতিনিধি:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্টকে 'আওয়ামী লীগের আমলে চাকরি পেয়েছে' অ্যাখ্যা দিয়ে মারধরের পর বিবস্ত্র করার অভিযোগ উঠেছে বহিরাগতদের বিরুদ্ধে। বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে এই ঘটনা ঘটে।
ঘটনার সময় যারা হামলার দৃশ্য ভিডিও করার চেষ্টা করছিলেন, হামলাকারীরা এমন তিনজনের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আহত মো. গোলাম আজম ফয়সাল, তিনি ওই চিকিৎসা কেন্দ্রেই ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে কর্মরত। হামলার পর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী জানান, চিকিৎসা কেন্দ্রের ২৩ নম্বর কক্ষে ফয়সাল ডিউটিরত অবস্থায় ছিলেন। প্রথমে একজন বহিরাগত এসে ফয়সালের পরিচয় নিশ্চিত করে যায়। এর কিছুক্ষণ পরেই ৭-৮ জন কক্ষে প্রবেশ করে ফয়সালকে ‘আওয়ামী লীগের আমলে চাকরি পেয়েছে’ অ্যাখ্যা দিয়ে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই মারধর শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা ফয়সালকে টেনেহিঁচড়ে চিকিৎসা কেন্দ্রের বাইরে নিয়ে আসে এবং এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। মারধরের পর যাওয়ার সময় যারা হামলার দৃশ্য ভিডিও করার চেষ্টা করছিলেন, হামলাকারীরা তিনজনের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়।’
ভুক্তভোগী গোলাম আযম ফয়সাল বলেন, ‘হামলাকারীদের মধ্যে একজন আরেকজনকে ‘জনি, আর মারিস না’ বলে থামায়। চলে যাওয়ার সময় তারা আমাকে চাকরিচ্যুত করার হুমকিও দিয়ে যায়।’
নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে ফয়সাল জানান, ‘তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই একটি ভাড়া বাসায় থাকেন এবং বর্তমানে আতঙ্কে আছেন।’ হামলাকারীদের কাউকে তিনি চেনেন না, তাই মামলার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি বলে জানান তিনি।
এই ঘটনায় চিকিৎসা কেন্দ্রের কর্মীদের মধ্য আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রের প্রধান চিকিৎসক মাফরুহা সিদ্দিকা লিপি। তিনি বলেন, ‘ফয়সাল আগে আওয়ামী লীগের মিছিল মিটিংয়ে যেত বলে আমরা শুনেছি। এই ঘটনায় আমরা সকলেই আতঙ্কিত। কেন্দ্রে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত না করলে আমাদের পক্ষে দায়িত্ব পালন করা কঠিন হয়ে পড়বে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তাকে বহিরাগতরা অত্যন্ত নির্মম ও অমানবিকভাবে প্রহার করেছে। আমরা জনি নামে একজনের কথা শুনেছি, যার নেতৃত্বে এই হামলা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সে সম্ভবত বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পুলিশের সহায়তায় জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, ‘আমি মাত্র বিষয়টি জানতে পারছি। এ বিষয়ে প্রক্টর স্যারের সাথে কথা বলবো। এছাড়া ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে গতকাল পুলিশর সাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মিটিং হয়েছে, তারা নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়ে কাজ করছে।’