জাতীয় কবি নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকী আজ: ২৭ নাকি ২৯ আগস্ট?

নিজস্ব প্রতিবেদক

আজ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী। তবে প্রতি বছরই এদিন ঘিরে জনমনে এক প্রশ্ন ওঠে—আসলে নজরুলের মৃত্যুদিবস ২৭ আগস্ট, নাকি ২৯ আগস্ট?

অনেকের কাছে উত্তরটা স্পষ্ট নয়। কারণ, বাংলা ও ইংরেজি ক্যালেন্ডারের তারিখের পার্থক্যের কারণে তৈরি হয়েছে এক ধরনের “তারিখ বিভ্রান্তি”।

মৃত্যুর সঠিক ইতিহাস


১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট, ঢাকার পিজি হাসপাতালে (বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) জাতীয় কবি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইংরেজি ক্যালেন্ডারে তাই তাঁর মৃত্যুদিন নিঃসন্দেহে ২৯ আগস্ট ১৯৭৬।

অন্যদিকে, বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সেই দিনটি ছিল ১২ ভাদ্র ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ। তাই প্রতিবছর বাংলা তারিখে, অর্থাৎ ১২ ভাদ্রেই, কবির মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়।

চলতি বছর (২০২৫) ১২ ভাদ্র পড়েছে ২৭ আগস্ট বুধবারে। এ কারণে আজ সারাদেশের গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো কবিকে স্মরণ করছে।

বিভ্রান্তির উৎস

অনেকে শুধু উইকিপিডিয়া বা ইংরেজি ক্যালেন্ডারভিত্তিক তথ্য দেখে মৃত্যুদিবসকে ২৯ আগস্ট ধরে নেন। আবার বাংলাদেশে অনুষ্ঠান ও আনুষ্ঠানিকতা হয় বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২৭ আগস্টে।
ফলেই তৈরি হয় দ্বন্দ্ব:

২৯ আগস্ট (গ্রেগরিয়ান) — কবির প্রকৃত মৃত্যুর দিন।

১২ ভাদ্র (বাংলা) — প্রতি বছর পালনকৃত মৃত্যুবার্ষিকীর দিন, যা এ বছর পড়েছে ২৭ আগস্ট।

কবির উত্তরাধিকার

‘বিদ্রোহী কবি’ নজরুল কেবল সাহিত্যিক ছিলেন না, তিনি ছিলেন বাঙালি জাতির সংগ্রামী চেতনার প্রতীক। সাম্য, মানবতা, প্রেম আর বিপ্লব—সবকিছু একসাথে মিশেছে তাঁর কবিতা ও গানে।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ধর্মীয় কুসংস্কার ও সামাজিক অবিচারের বিরুদ্ধে জ্বালাময়ী আহ্বান—নজরুল ছিলেন শোষিত মানুষের কণ্ঠস্বর।

জাতীয় কবির জীবনসংগ্রামও ছিল কম কষ্টের নয়। দীর্ঘ অসুস্থতায় তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন, কিন্তু তাঁর সৃষ্টিগুলো আজও বাঙালির হৃদয়ে বেঁচে আছে প্রেরণার শিখা হয়ে।

অতএব, বিভ্রান্তির অবসান ঘটাতে হবে। কাজী নজরুল ইসলাম ২৯ আগস্ট ১৯৭৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন—এটি ইতিহাস। আর প্রতি বছর বাংলা ক্যালেন্ডারের ১২ ভাদ্র, অর্থাৎ এ বছর ২৭ আগস্ট, তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হচ্ছে।

কোন তারিখে পালিত হলো সেটা বড় বিষয় নয়; আসল কথা হলো, জাতীয় কবির উত্তরাধিকারকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া।