বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, রাবি:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভোক্তা অধিকার সংস্থা কনশাস কনজ্যুমার্স সোসাইটি (সিসিএস) ও কনজ্যুমার্স ইয়ুথ সোসাইটির (সিওয়াইএস) উদ্যোগে ভোক্তা অধিকার সম্মেলন-২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (২৭ আগস্ট) সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় একজন ছেলে ও একজন মেয়ে শিক্ষার্থীর হাতে সনদপত্র তুলে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. মাঈন উদ্দীনের। এছাড়াও সম্মেলনে উপস্থিত প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে অংশগ্রহণের জন্য সনদপত্র প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, “আমি কিছুক্ষণ আগে শেষ সেশনে ক্যারিয়ার নিয়ে দুর্দান্ত কিছু আলোচনা শুনছিলাম। ক্যারিয়ারের শুরুতে আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন একটি রিজিউমে বা সিভি। যারা ক্যারিয়ারের নবীন আবেদনকারী, তাদের জন্য এটি অত্যন্ত জরুরি। এখানে সম্ভবত রেফারেন্স নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। একজন প্রশ্ন করেছিলেন—সিভিতে রেফারেন্স কতটা গুরুত্বপূর্ণ? আসলে, আমার সিভিতে যে তথ্যগুলো দিয়েছি সেগুলো সত্য কিনা তা যাচাই করার জন্য রেফারেন্স প্রয়োজন। আবার যদি উচ্চশিক্ষায় যেতে চাই, তবে রেফারেন্স সেখানে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অনেক সময় মনে করি উন্নত দেশগুলোতে নেপোটিজম বা বৈষম্য নেই, কিন্তু বাস্তবে সারা পৃথিবীতেই বৈষম্য বিদ্যমান।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা সবাই চাই সাশ্রয়ী দামে খাবার খেতে। কিন্তু শুধু সস্তা বলেই কোনো খাবার গ্রহণ করা যাবে না। খাদ্য যদি নিরাপদ না হয়, তবে তা মানুষের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়। তাই আমাদের প্রথম শর্ত হওয়া উচিত, খাদ্য অবশ্যই নিরাপদ হতে হবে। কম দামের খাবার খাব, কিন্তু নিরাপদ খাবার খাব। এজন্য উৎপাদন থেকে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে ভোক্তা অধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও যদি সচেতন ভোক্তা হিসেবে গড়ে ওঠে, তবে তারাও সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সক্ষম হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. মাঈন উদ্দীন বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, “কনশাস কনজ্যুমার্স সোসাইটি ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করছে—এটা আমাদের সমাজের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। ভোক্তা অধিকার কেবল অর্থনৈতিক বা আইনি কোনো বিষয় নয়, বরং এটি একটি সামাজিক দায়িত্ব। আমরা প্রতিনিয়তই দেখি, আম, লিচু, ড্রাগন ফল, কলা ইত্যাদি ফলের সঙ্গে ফরমালিন মেশানো হচ্ছে, যা আমাদের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। অথচ ভোক্তা হিসেবে আমাদের সতেজ ফলমূল এবং নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ করার কথা।”
তিনি আরও বলেন,“আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা আগামী দিনের নেতৃত্ব দেবে। তাই তাদের শুধু একাডেমিক পড়াশোনা নয়, জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ও নৈতিক নেতৃত্ব প্রদানের জন্যও প্রস্তুত করা জরুরি। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্য থেকে ভালো মানের নেতৃত্ব গড়ে তোলা। যারা নিরাপদ খাদ্য, সঠিক তথ্য ও ন্যায্য বাজার ব্যবস্থার পক্ষে কথা বলবে—তারাই প্রকৃত অর্থে সমাজের নেতৃত্ব দিতে পারবে।”
সম্মেলনে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কনশাস কনজ্যুমার্স সোসাইটির সভাপতি মো. মুরাদ হোসেনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. মাঈন উদ্দীন, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুর রহমান, রাজশাহী ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ইব্রাহীম হোসেনসহ প্রায় ৪ শতাধিক শিক্ষার্থী।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে “কনশাস কনজ্যুমার্স সোসাইটি” যাত্রা শুরু করে। শুরু থেকেই সংগঠনটি ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের ভোক্তা অধিকার, খাদ্য নিরাপত্তা এবং ভোক্তা সুরক্ষা আইনের ব্যাপারে সচেতন করে আসছে। প্রতি বছর বিভিন্ন সেমিনার, কর্মশালা ও প্রচারণা কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভোক্তা সচেতনতা বাড়ানোই সংগঠনের মূল লক্ষ্য।