
আরমান হোসেন বাদলঃ
শিক্ষা ভবনের বিতর্কিত পরিচালক কাজী কাইয়ুম শিশিরের শাস্তির দাবি জানিয়েছে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষক-কর্মচারী প্লাটফর্মের নেতারা।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ১৪তম ব্যাচের এই কর্মকর্তার জন্য ফ্যাসিবাদী আওয়ামী শাসনের ১৭ বছর পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর ছিলো বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছে এক আতঙ্কের নাম। তাই ঐক্যবদ্ধ শিক্ষক-কর্মচারী প্লাটফর্মের নেতারা বলছেন, অবিলম্বে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে তাকে প্রত্যাহার করতে হবে।
একই সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিশিরের চাকরিচ্যুতির যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা। ঐক্যবদ্ধ শিক্ষক-কর্মচারী প্লাটফর্মের নেতারা বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক আবু কাইয়ুম শিশির (মনিটরিং এন্ড ইভ্যালুয়েশন উইং) শিক্ষা প্রশাসনের দায়িত্বশীল পদে থেকেও নৈতিকতা ও স্বচ্ছতার পরিপন্থী নানা কর্মকান্ডে জড়িত হয়েছেন। একাধিক অনিয়ম অপকর্ম করে আগস্ট পরবর্তীতে উপহার স্বরূপ একের পর এক দপ্তরের দায়িত্ব পেয়েছেন যা শিক্ষা প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন কাছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো- কাজী আবু কাইয়ুম ওরফে শিশির বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ১৪তম ব্যাচের একজন ইংরেজি শিক্ষক। ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে ২৪ আগস্ট শিক্ষা সেক্টরের মিনিস্ট্রি অডিট খ্যাত পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক পদে পদায়ন পান।
ফ্যাসিবাদী আওয়ামী শাসনের ১৭ বছর পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর ছিল বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছে এক আতঙ্কের নাম। মিনিস্ট্রি অডিটের নামে শিক্ষক কর্মচারীর এক মাসের এমপিওর টাকা আদায় করা ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। স্বৈরাচার পতনের পর এই দপ্তরের অধ্যাপক শিশির একই ঘটনার পুনরাবৃতি করেন। মাত্র তিন মাসে এই দপ্তর থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন অধ্যাপক শিশির। অন্তরবর্তী সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়লে অধ্যাপক শিশিরকে তিন মাসের মধ্যে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর থেকে বদলি করে ময়মনসিংহে মুমিনুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজে বদলি করা হয়। তিনি মন্ত্রণালয়ের এ আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন যা শিক্ষা প্রশাসনের ইতিহাসে প্রথম এবং গুন্ডাপান্ডা ভাড়া করে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের তার চেয়ার দখল করতে আসেন। তার বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় নিরাপত্তা চেয়ে অভিযোগ করেন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর। সে সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সেই মামলা আপিল করে তার বদলির আদেশ বহাল রাখেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বদলির আদেশ বহাল থাকলেও তিনি মমিনুন্নেছা মহিলা কলেজে একদিনের জন্য উপস্থিত হননি।
দুর্নীতির দায়ে বদলি, বদলি ঠেকাতে মন্ত্রণালয়ের আদেশের বিরুদ্ধে মামলা করেও পরবর্তীতে তাকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মনিটরিং এন্ড ইভ্যালুয়েশান উইংয়ের পরিচালক পদে পদায়ন করে। শিশিরের বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিভাগীয় মামলা, অসদাচরণ ও সরকারি চাকরি বিধি লঙ্ঘনের দায়ে গুরুদন্ড প্রদান অথবা চাকুরিচ্যুতির সিদ্ধান্ত নিলেও তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। বিভাগীয় মামলা থাকা কোনো কর্মকর্তাকে তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে পদায়নের সুযোগ না থাকলেও তাকে দুইটি দপ্তরের পরিচালক করা হয়েছে। যা পুরোপুরি চাকরিবিধি লঙ্ঘনের শামিল। এনসিটিবির চেয়ারম্যান পদেও জন্য শিক্ষা উপদেষ্টাকে এক কোটি টাকা ঘুষ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল যা গত ৪ জুন সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার জানিয়েছিলেন।
তিন নাম প্রকাশ না করলেও শিক্ষার ব্যক্তিবর্গ জানিয়েছিলেন এই ঘুষ অফারকারি অধ্যাপক কাইয়ুম শিশির। অথচ তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শিশিরের স্ত্রী ঢাকা স্টেট কলেজের ইংরেজি শিক্ষক। স্ত্রী লন্ডনে বসবাস করলেও তার ইএফটির মাধ্যমে সেই বেতন তুলছেন শিশির নিজে। পদোন্নতি ও বদলিতে অনিয়ম। যোগ্যতা ও সিনিয়রিটি উপেক্ষা করে সুবিধাভোগীদের অগ্রাধিকার দেওয়া। আর্থিক অনিয়ম, বিভিন্ন প্রকল্পের টেন্ডায় ও বরাদ্দে স্বজনপ্রীতি ও কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ। ক্ষমতার অপব্যবহার ভিন্নমত পোষণকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রতি হুমকি-ধমকি ও হয়রানি করেন।স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গোপনে গ্রহণ, নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ফাইল অনুমোদন করেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাজে হস্তক্ষেপ।