‘আল্লাহ তুই দেহিস’—চুল-দাড়ি কেটে অপমানিত বয়স্ক ব্যক্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও নিয়ে তীব্র আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, সাধুর মতো পোশাক-আশাকের এক বয়স্ক ব্যক্তিকে কয়েকজন লোক জোর করে ধরে তাঁর চুল ও দাড়ি কেটে দিচ্ছেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিতদের পোশাক-চেহারায় ধর্মীয় আবহ থাকলেও, ভিডিওতে দৃশ্যমান আচরণ সমাজের কাছে একেবারেই অগ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে।

চুল কেটে দেওয়ার সময় ভুক্তভোগী ব্যক্তি বারবার কেঁদে বলছিলেন— “আল্লাহ তুই দেহিস।” এই মর্মস্পর্শী দৃশ্য অনেককে আবেগাপ্লুত করেছে, আবার একইসঙ্গে ক্ষুব্ধও করেছে। ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে নেটিজেনরা নিন্দা জানিয়ে মন্তব্য করছেন— মানুষকে এইভাবে অপমান করা মানবিক কিংবা ধর্মীয় কোনো দৃষ্টিকোণ থেকেই গ্রহণযোগ্য নয়।

গত বছরের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর থেকে নানা ধরনের অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা বেড়ে যাওয়ায় এ ধরনের অমানবিক আচরণ যেন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সমাজে সহনশীলতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ কমে যাওয়ার কারণেই এমন ঘটনা ঘন ঘন ঘটছে।

এই একটি বাক্যই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অসংখ্য মানুষের হৃদয় নাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ, নিপীড়িত মানুষের আহাজারি কখনো আল্লাহর দরবারে বৃথা যায় না।

কোরআনে আল্লাহ তায়ালা স্পষ্টভাবে সতর্ক করেছেন - 
“জালিমদের ব্যাপারে তুমি মনে করো না যে, আল্লাহ তাদেরকে অগ্রাহ্য করছেন। তিনি কেবল তাদেরকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশ দিচ্ছেন। কিন্তু যখন সেই দিন আসবে, তখন তাদের চোখ বিস্ফারিত হয়ে যাবে।” (সূরা ইবরাহিম: ৪২)

এমনকি রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন - 
“মাজলুমের (নিপীড়িতের) দোয়ার প্রতি সাবধান হও, কারণ তার আর আল্লাহর মাঝে কোনো পর্দা থাকে না।” (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)

এমন ঘটনার পর সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। অনেকে বলছেন,
“যেখানে ইসলাম শেখায় দয়া আর সম্মান, সেখানে আল্লাহর নামে চলা মানুষদের দ্বারাই কেন এমন অমানবিক নির্যাতন ঘটছে?”

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের ঘটনা শুধু একজন মানুষকেই নয়, বরং সমাজের সামগ্রিক মানবিকতাকে কলঙ্কিত করে। মানুষ প্রশ্ন তুলছে - আমরা কি ভুলে যাচ্ছি, ধর্মীয় পোশাক বা বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠান ইসলাম নয়, বরং ইসলাম হলো ন্যায়বিচার, দয়া ও মানবিকতা?

কোরআনের আরেক জায়গায় আল্লাহ বলেছেন -
“আল্লাহ কোনো সম্প্রদায়কে পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থাকে পরিবর্তন করে।” (সূরা আর-রাদ: ১১)

অতএব, সমাজে এ ধরনের জুলুম-নিপীড়ন চলতে থাকলে আমাদেরকেই প্রশ্ন করতে হবে— আমরা কি সত্যিই ইসলামের শিক্ষাকে ধারণ করছি, নাকি কেবল বাহ্যিক রূপটুকু আঁকড়ে ধরে আসল মর্ম ভুলে যাচ্ছি?