বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতরা বিশ্বমঞ্চে চমক দেখাচ্ছেন

বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, শিল্প ও ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের আলো ছড়ানো এখন আর নতুন কিছু নয়। একদিকে আবিদুর চৌধুরীর মতো তরুণ ডিজাইনার অ্যাপলের সবচেয়ে পাতলা আইফোনের নকশা করে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় শিরোনাম হচ্ছেন, অন্যদিকে ক্রিকেট, চলচ্চিত্র কিংবা গবেষণায়ও প্রবাসী বাঙালিরা আলোড়ন তুলছেন।

কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—সরাসরি বাংলাদেশে বেড়ে ওঠা, এখানকার শিক্ষা ও পরিবেশে গড়ে ওঠা প্রতিভারা কবে সেই জায়গায় পৌঁছাতে পারবে?

বংশোদ্ভূতদের সাফল্য, বাংলাদেশের সীমাবদ্ধতা

বিদেশে জন্ম নেয়া কিংবা বেড়ে ওঠা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতরা বড় হয়েছে উন্নত সুযোগ-সুবিধার ভেতর। উন্নত ল্যাব, গবেষণা পরিবেশ, স্বচ্ছ প্রতিযোগিতা আর আধুনিক শিক্ষার কারণে তারা দ্রুত আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে জন্ম নেয়া প্রতিভাবানদের জন্য সেই পথ অনেক কঠিন।

এখানকার শিক্ষাব্যবস্থা এখনও মুখস্থ নির্ভর, গবেষণায় বরাদ্দ নগণ্য, আর উদ্ভাবনকে এগিয়ে নেয়ার জন্য সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ প্রায় নেই বললেই চলে। ফলে প্রতিভা থাকলেও আন্তর্জাতিক মঞ্চে তা বিকশিত হতে পারে না।

কেন পিছিয়ে বাংলাদেশ?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মূল কারণ অবকাঠামোগত দুর্বলতা। গবেষণায় বাজেট কম, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্তর্জাতিক মানের ল্যাব নেই, আবার উদ্ভাবনী চিন্তাধারাকে উৎসাহিত করার জায়গাও সীমিত। তার ওপর আছে রাজনৈতিক প্রভাব, মেধা পাচারের প্রবণতা এবং প্রতিভা ধরে রাখার অক্ষমতা।

যেসব বাংলাদেশি মেধাবী শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যান, তারা আর দেশে ফেরেন না। কারণ বিদেশে তারা পায় কাজের পরিবেশ, সম্মান আর সুযোগ, যা বাংলাদেশে ফেরার পর খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
 
পাঠকের মনে প্রশ্ন
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের সাফল্যে যেমন গর্ব হয়, তেমনি একটা কষ্টও থেকে যায়—কেন সরাসরি এখানকার কেউ সেই মঞ্চে জায়গা করে নিতে পারছে না? কবে আমরা দেখব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা বুয়েটের কোনো শিক্ষার্থী একদিন NASA’র প্রধান প্রকৌশলী, Nobel বিজয়ী বা অ্যাপলের লিড ডিজাইনার হচ্ছেন?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, 
আমাদের প্রতিভার অভাব নেই। কিন্তু সুযোগ আর সহায়তা পেলে আমরাও অনেক দূর যেতে পারি।
শিক্ষাবিদ ও বিশ্লেষকরা মনে করেন, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ না নিলে এই ব্যবধান কাটিয়ে ওঠা কঠিন হবে। তাদের মতে, “দেশে প্রতিভা আছে, কিন্তু বিশ্বমানের প্ল্যাটফর্ম গড়ে না তুললে তারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চমক দেখাতে পারবে না।” বাংলাদেশে প্রতিভার অভাব নেই, কিন্তু সেই প্রতিভা বিকশিত হওয়ার পরিবেশ নেই। 

বংশোদ্ভূতদের সাফল্য আমাদের প্রমাণ করে—বাংলাদেশি রক্তে বিশ্বজয়ের ক্ষমতা আছে। এখন সময় এসেছে, সরাসরি বাংলাদেশের সন্তানদের জন্যও এমন এক পরিবেশ তৈরির, যেখানে তারা বিশ্বমঞ্চে চমক দেখাতে পারবে।