রাবি প্রতিনিধি:
দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আবারও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন ঘিরে ক্যাম্পাসজুড়ে বইছে নির্বাচনী উত্তাপ। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে প্রতিটি হল প্রাঙ্গণে জোরেসোরে চলছে প্রার্থীদের প্রচারণা। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ভিপি-জিএস প্রার্থীরা থাকলেও, পিছিয়ে নেই অন্যান্য পদের প্রতিদ্বন্দ্বিরাও। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পরিষদ সিনেটের ৫টি ছাত্র প্রতিনিধি পদ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এখনো তেমন আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়নি। অনেকেই এখনো জানেন না সিনেট কী বা এর কার্যকারিতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। অথচ সিনেট ছাত্র প্রতিনিধির এই ৫টি পদের বিপরীতে লড়ছেন মোট ৫৮ জন প্রার্থী।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৭২ বছরে ২০০০ সলের আগে সিনেট অধিবেশন হয়েছে ১৯টি; আর ২০০০-এর পরে হয়েছে মাত্র ৩ বার। অধ্যাদেশের ৭৩ (ক) ধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরে একবার সিনেট অধিবেশন হওয়ার কথা থাকলেও রাবিতে ২০১৬ সালের পর এখন পর্যন্ত কোন অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়নি।
সিনেট কী, কেন?
৭৩-এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম হলো সিনেট। উপাচার্য নির্বাচন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট অনুমোদন, নতুন বিভাগ খোলা, এমনকি আইন সংশোধন—সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় সিনেট অধিবেশনে। সিনেটের ১০৪ সদস্যের গুরুত্বপূর্ণ পরিষদে শিক্ষার্থীদের হয়ে কথা বলার সুযোগ পান কেবল ৫ জন নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধি।
এখানে পদাধিকারবলে সভাপতি থাকেন উপাচার্য, আর সদস্য হিসেবে থাকেন দুইজন উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ। এছাড়া ২৫ জন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট, ৫ জন গবেষণা সংস্থার প্রতিনিধি, রাষ্ট্রপতি তথা আচার্য মনোনীত ৫ জন শিক্ষাবিদ, সরকার মনোনীত ৫ জন সরকারি কর্মকর্তা এবং জাতীয় সংসদের স্পিকার মনোনীত ৫ জন সংসদ সদস্য সিনেটের সদস্য হন। আরও থাকেন ৫ জন অধিভুক্ত কলেজের অধ্যক্ষদের প্রতিনিধি, শিক্ষা পরিষদ কর্তৃক মনোনীত ১০ জন কলেজ শিক্ষক এবং বিশ্ববিদ্যালয় আওতাধীন শিক্ষা বোর্ডের ২ জন চেয়ারম্যান। এর বাইরে শিক্ষকদের ভোটে নির্বাচিত ৩৩ জন শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের ভোটে নির্বাচিত ৫ জন ছাত্র প্রতিনিধি নিয়ে সিনেটে অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের ভিপি ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমাব জাহিদ বলেন, সিনেট কেবল একটি নীতিনির্ধারণী সংস্থা নয়, বরং এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরুদণ্ড। আমি বিশ্বাস করি, একজন সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি শুধু শিক্ষার্থীদের নয়, পুরো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের প্রতিনিধিত্ব করেন। রাকসু যেখানে মূলত শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কাজ করে, সিনেট সদস্যদের দায়িত্ব আরও বিস্তৃত। তারা শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী—সবাইয়ের অধিকার ও স্বার্থ তুলে ধরেন।
তিনি সংসদের সঙ্গে সিনেটের তুলনা করে বলেন, সংসদ যেমন দেশের নীতি ও বাজেট নির্ধারণ করে, তেমনি সিনেটও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট, একাডেমিক নীতি, অবকাঠামো উন্নয়ন, গবেষণা খাত ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নির্ধারণ করে। আমি নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীবান্ধব বাজেট প্রণয়ন, হলের সিটসংকট সমাধান, গ্রন্থাগারের মানোন্নয়ন, আইসিটি সুবিধা উন্নয়ন এবং ক্রীড়া-সংস্কৃতিচর্চায় বরাদ্দ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে চাই। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত মতামত সংগ্রহ করে তা সিনেটে তুলে ধরব, যাতে বিশ্ববিদ্যালয় আরও আধুনিক, গবেষণাভিত্তিক ও শিক্ষার্থীবান্ধব হয়ে উঠতে পারে।
ছাত্রদলের ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ ভিপি ও সিনেট প্রার্থী শেখ নূর উদ্দীন আবীর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলো সেই জায়গা যেখানে আগামী দিনের নীতি ও পরিকল্পনা নির্ধারিত হয়। সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি এই পদ শুধু মর্যাদার নয়, বরং দায়িত্ব ও কর্তব্যের জায়গা। শিক্ষার্থীদের অনেক সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত রয়েছে যেমন—আবাসন সংকট, ল্যাবরেটরি সংকট, পর্যাপ্ত গবেষণা তহবিলের অভাব, লাইব্রেরির হালনাগাদ বইয়ের ঘাটতি। এসব সমস্যা সরাসরি সিনেটে উত্থাপন করে সমাধানের পথ খুঁজে বের করা সম্ভব। আমি চাই, শিক্ষার্থীদের দাবি বাজেটে সঠিকভাবে প্রতিফলিত হোক, গবেষণা ও উদ্ভাবনে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো হোক এবং ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত হোক।
সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি প্রার্থী ও রাবি প্রেসক্লাবের সভাপতি মনির হোসেন মাহিন বলেন, সিনেট সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ। রাকসু শুধু শিক্ষার্থী অধিকার আদায়ের কথা বলে কিন্তু সিনেট সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সকল স্টেকহোল্ডাদের কথা বলে। সেই জায়গা থেকেই সকলের অধিকার আদায়ের কন্ঠস্বর হয়ে কাজ করার জন্যই সিনেট পদপ্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছি।
তিনি আরও বলেন, ক্যাম্পাসের কলম সৈনিক হিসেবে আমি জানি ক্যাম্পাসের কোথায় কি সমস্যা, কোথায় অনিয়ম-দুর্নীতি ও কোন সেক্টরগুলোতে জোর দিলে বিশ্ববিদ্যালয় অনেক দূর এগিয়ে যাবে। সেই জায়গাগুলোতে আমার সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা দিয়ে কাজে লাগাতে পারবো বলে আমি বিশ্বাস করি। নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীদের পরামর্শের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট পাশ থেকে শুরু উপাচার্য নিয়োগের মধ্যেও শিক্ষার্থীদের প্রতিফলন ঘটানোর মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করবো ইনশাআল্লাহ।
রাবি প্রেসক্লাবের সিনিয়র সভাপতি ও সিনেট প্রার্থী সৈয়দ সাকিব বলেন, ২০০০ সনের আগে সিনেট অধিবেশন হয়েছে ১৯টি; আর ২০০০-এর পরে সিনেট হয়েছে মাত্র ৩টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কয়েকজন সাংবাদিক, শিক্ষক-
কর্মকর্তাদের কাছে বিষয়টি নিয়ে জানার চেষ্টা করেছি। মূলত ২০০০ সনের পর থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক নেতারা ক্যাম্পাসে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় অযাচিত হস্তক্ষেপ করেছে। সিনেট মনোনীত উপাচার্য না থাকায়, অনেকটা ক্ষমতাসীন দলের পার্পাস সার্ভ করার জন্যই তারা কাজ করেছেন। ফলশ্রুতিতে যেটা হয়েছে, রাবি প্রেসক্লাবের সিনিয়র সভাপতি ও সিনেট প্রার্থী সৈয়দ সাকিব কালবেলাকে বলেন, ২০০০ সনের আগে সিনেট অধিবেশন হয়েছে ১৯টি; আর ২০০০-এর পরে সিনেট হয়েছে মাত্র ৩টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কয়েকজন সাংবাদিক, শিক্ষক- কর্মকর্তাদের কাছে বিষয়টি নিয়ে জানার চেষ্টা করেছি। মূলত ২০০০ সনের পর থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক নেতারা ক্যাম্পাসে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় অযাচিত হস্তক্ষেপ করেছে। সিনেট মনোনীত উপাচার্য না থাকায়, অনেকটা ক্ষমতাসীন দলের পার্পাস সার্ভ করার জন্যই তারা কাজ করেছেন। ফলশ্রুতিতে যেটা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টি আর অধ্যাদেশ মেনে পরিচালিত হয়নি।
তিনি বলেন, বছরের পর বছর ধরে সিনেট অকার্যকর রেখে, উপাচার্যরা জবাবদিহির বাইরে ছিল। অনেকে হয়েছে; এই অচলায়তন দূর করে সিনেট অধিবেশনে শিক্ষার্থীদের অংশীদারীত্ব নিশ্চিত করতে হবে। আমি নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীদের কল্যাণ, স্বচ্ছ বাজেট বাস্তবায়ন, প্রশাসনিক দুর্নীতির প্রতিবাদ এবং মানসম্মত আবাসন, খাদ্য, শ্রেণিকক্ষ, ল্যাব ও নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করতে সিনেটে শিক্ষার্থীদের হয়ে কথা বলতে চাই।
রাবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি প্রার্থী ইরফান তামিম বলেন, সিনেট এমন একটি মঞ্চ যেখানে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ও প্রশাসনের নীতি একসাথে দাঁড়ায়। নির্বাচিত হলে আমি শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের দাবি তুলে ধরবো না, বরং শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও প্রশাসনের মধ্যে একটি ভরসাযোগ্য সেতুবন্ধন তৈরি করাই হবে আমার মূল কাজ।
জুলাই আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি প্রার্থী তাসিন খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের মতো। এখানে যেমন বৈচিত্র্য আছে, তেমনি আছে সমস্যা, বৈষম্য ও সংঘাত। আমি বিশ্বাস করি, একজন সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি এই ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের জন্য সংসদ সদস্যের মতো। তার দায়িত্ব হলো—ন্যায়বিচার, সমতা ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করা।
আমি লক্ষ্য করেছি, ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময় বৈষম্যমূলক আচরণ, ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বজনপ্রীতি শিক্ষার্থীদের ক্ষতিগ্রস্ত করে। সিনেটে থেকে আমি এসবের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবো।শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় ন্যায্য নীতি প্রণয়ন, আবাসন, স্বাস্থ্য ও খাদ্য সুবিধায় বৈষম্য দূর করা, প্রতিবন্ধী ও প্রান্তিক শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ নিশ্চিত করা। সবার জন্য সমানভাবে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা। যেখানে কেউ উপেক্ষিত হবে না, সবাই সমান অধিকার নিয়ে এগোবে। আমি বিশ্বাস করি, সিনেটে আমার ভূমিকা হবে সেই ন্যায্যতার কণ্ঠস্বর।
সিনেট কী, কেন?
৭৩-এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম হলো সিনেট। উপাচার্য নির্বাচন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট অনুমোদন, নতুন বিভাগ খোলা, এমনকি আইন সংশোধন—সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় সিনেট অধিবেশনে। সিনেটের ১০৪ সদস্যের গুরুত্বপূর্ণ পরিষদে শিক্ষার্থীদের হয়ে কথা বলার সুযোগ পান কেবল ৫ জন নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধি।
এখানে পদাধিকারবলে সভাপতি থাকেন উপাচার্য, আর সদস্য হিসেবে থাকেন দুইজন উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ। এছাড়া ২৫ জন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট, ৫ জন গবেষণা সংস্থার প্রতিনিধি, রাষ্ট্রপতি তথা আচার্য মনোনীত ৫ জন শিক্ষাবিদ, সরকার মনোনীত ৫ জন সরকারি কর্মকর্তা এবং জাতীয় সংসদের স্পিকার মনোনীত ৫ জন সংসদ সদস্য সিনেটের সদস্য হন। আরও থাকেন ৫ জন অধিভুক্ত কলেজের অধ্যক্ষদের প্রতিনিধি, শিক্ষা পরিষদ কর্তৃক মনোনীত ১০ জন কলেজ শিক্ষক এবং বিশ্ববিদ্যালয় আওতাধীন শিক্ষা বোর্ডের ২ জন চেয়ারম্যান। এর বাইরে শিক্ষকদের ভোটে নির্বাচিত ৩৩ জন শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের ভোটে নির্বাচিত ৫ জন ছাত্র প্রতিনিধি নিয়ে সিনেটে অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের ভিপি ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমাব জাহিদ বলেন, সিনেট কেবল একটি নীতিনির্ধারণী সংস্থা নয়, বরং এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরুদণ্ড। আমি বিশ্বাস করি, একজন সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি শুধু শিক্ষার্থীদের নয়, পুরো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের প্রতিনিধিত্ব করেন। রাকসু যেখানে মূলত শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কাজ করে, সিনেট সদস্যদের দায়িত্ব আরও বিস্তৃত। তারা শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী—সবাইয়ের অধিকার ও স্বার্থ তুলে ধরেন।
তিনি সংসদের সঙ্গে সিনেটের তুলনা করে বলেন, সংসদ যেমন দেশের নীতি ও বাজেট নির্ধারণ করে, তেমনি সিনেটও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট, একাডেমিক নীতি, অবকাঠামো উন্নয়ন, গবেষণা খাত ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নির্ধারণ করে। আমি নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীবান্ধব বাজেট প্রণয়ন, হলের সিটসংকট সমাধান, গ্রন্থাগারের মানোন্নয়ন, আইসিটি সুবিধা উন্নয়ন এবং ক্রীড়া-সংস্কৃতিচর্চায় বরাদ্দ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে চাই। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত মতামত সংগ্রহ করে তা সিনেটে তুলে ধরব, যাতে বিশ্ববিদ্যালয় আরও আধুনিক, গবেষণাভিত্তিক ও শিক্ষার্থীবান্ধব হয়ে উঠতে পারে।
ছাত্রদলের ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ ভিপি ও সিনেট প্রার্থী শেখ নূর উদ্দীন আবীর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলো সেই জায়গা যেখানে আগামী দিনের নীতি ও পরিকল্পনা নির্ধারিত হয়। সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি এই পদ শুধু মর্যাদার নয়, বরং দায়িত্ব ও কর্তব্যের জায়গা। শিক্ষার্থীদের অনেক সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত রয়েছে যেমন—আবাসন সংকট, ল্যাবরেটরি সংকট, পর্যাপ্ত গবেষণা তহবিলের অভাব, লাইব্রেরির হালনাগাদ বইয়ের ঘাটতি। এসব সমস্যা সরাসরি সিনেটে উত্থাপন করে সমাধানের পথ খুঁজে বের করা সম্ভব। আমি চাই, শিক্ষার্থীদের দাবি বাজেটে সঠিকভাবে প্রতিফলিত হোক, গবেষণা ও উদ্ভাবনে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো হোক এবং ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত হোক।
সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি প্রার্থী ও রাবি প্রেসক্লাবের সভাপতি মনির হোসেন মাহিন বলেন, সিনেট সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ। রাকসু শুধু শিক্ষার্থী অধিকার আদায়ের কথা বলে কিন্তু সিনেট সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সকল স্টেকহোল্ডাদের কথা বলে। সেই জায়গা থেকেই সকলের অধিকার আদায়ের কন্ঠস্বর হয়ে কাজ করার জন্যই সিনেট পদপ্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছি।
তিনি আরও বলেন, ক্যাম্পাসের কলম সৈনিক হিসেবে আমি জানি ক্যাম্পাসের কোথায় কি সমস্যা, কোথায় অনিয়ম-দুর্নীতি ও কোন সেক্টরগুলোতে জোর দিলে বিশ্ববিদ্যালয় অনেক দূর এগিয়ে যাবে। সেই জায়গাগুলোতে আমার সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা দিয়ে কাজে লাগাতে পারবো বলে আমি বিশ্বাস করি। নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীদের পরামর্শের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট পাশ থেকে শুরু উপাচার্য নিয়োগের মধ্যেও শিক্ষার্থীদের প্রতিফলন ঘটানোর মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করবো ইনশাআল্লাহ।
রাবি প্রেসক্লাবের সিনিয়র সভাপতি ও সিনেট প্রার্থী সৈয়দ সাকিব বলেন, ২০০০ সনের আগে সিনেট অধিবেশন হয়েছে ১৯টি; আর ২০০০-এর পরে সিনেট হয়েছে মাত্র ৩টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কয়েকজন সাংবাদিক, শিক্ষক-
কর্মকর্তাদের কাছে বিষয়টি নিয়ে জানার চেষ্টা করেছি। মূলত ২০০০ সনের পর থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক নেতারা ক্যাম্পাসে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় অযাচিত হস্তক্ষেপ করেছে। সিনেট মনোনীত উপাচার্য না থাকায়, অনেকটা ক্ষমতাসীন দলের পার্পাস সার্ভ করার জন্যই তারা কাজ করেছেন। ফলশ্রুতিতে যেটা হয়েছে, রাবি প্রেসক্লাবের সিনিয়র সভাপতি ও সিনেট প্রার্থী সৈয়দ সাকিব কালবেলাকে বলেন, ২০০০ সনের আগে সিনেট অধিবেশন হয়েছে ১৯টি; আর ২০০০-এর পরে সিনেট হয়েছে মাত্র ৩টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কয়েকজন সাংবাদিক, শিক্ষক- কর্মকর্তাদের কাছে বিষয়টি নিয়ে জানার চেষ্টা করেছি। মূলত ২০০০ সনের পর থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক নেতারা ক্যাম্পাসে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় অযাচিত হস্তক্ষেপ করেছে। সিনেট মনোনীত উপাচার্য না থাকায়, অনেকটা ক্ষমতাসীন দলের পার্পাস সার্ভ করার জন্যই তারা কাজ করেছেন। ফলশ্রুতিতে যেটা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টি আর অধ্যাদেশ মেনে পরিচালিত হয়নি।
তিনি বলেন, বছরের পর বছর ধরে সিনেট অকার্যকর রেখে, উপাচার্যরা জবাবদিহির বাইরে ছিল। অনেকে হয়েছে; এই অচলায়তন দূর করে সিনেট অধিবেশনে শিক্ষার্থীদের অংশীদারীত্ব নিশ্চিত করতে হবে। আমি নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীদের কল্যাণ, স্বচ্ছ বাজেট বাস্তবায়ন, প্রশাসনিক দুর্নীতির প্রতিবাদ এবং মানসম্মত আবাসন, খাদ্য, শ্রেণিকক্ষ, ল্যাব ও নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করতে সিনেটে শিক্ষার্থীদের হয়ে কথা বলতে চাই।
রাবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি প্রার্থী ইরফান তামিম বলেন, সিনেট এমন একটি মঞ্চ যেখানে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ও প্রশাসনের নীতি একসাথে দাঁড়ায়। নির্বাচিত হলে আমি শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের দাবি তুলে ধরবো না, বরং শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও প্রশাসনের মধ্যে একটি ভরসাযোগ্য সেতুবন্ধন তৈরি করাই হবে আমার মূল কাজ।
জুলাই আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি প্রার্থী তাসিন খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের মতো। এখানে যেমন বৈচিত্র্য আছে, তেমনি আছে সমস্যা, বৈষম্য ও সংঘাত। আমি বিশ্বাস করি, একজন সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি এই ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের জন্য সংসদ সদস্যের মতো। তার দায়িত্ব হলো—ন্যায়বিচার, সমতা ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করা।
আমি লক্ষ্য করেছি, ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময় বৈষম্যমূলক আচরণ, ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বজনপ্রীতি শিক্ষার্থীদের ক্ষতিগ্রস্ত করে। সিনেটে থেকে আমি এসবের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবো।শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় ন্যায্য নীতি প্রণয়ন, আবাসন, স্বাস্থ্য ও খাদ্য সুবিধায় বৈষম্য দূর করা, প্রতিবন্ধী ও প্রান্তিক শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ নিশ্চিত করা। সবার জন্য সমানভাবে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা। যেখানে কেউ উপেক্ষিত হবে না, সবাই সমান অধিকার নিয়ে এগোবে। আমি বিশ্বাস করি, সিনেটে আমার ভূমিকা হবে সেই ন্যায্যতার কণ্ঠস্বর।