বাংলা চলচ্চিত্রের অমর নায়ক সালমান শাহ—যার আকস্মিক মৃত্যু ১৯৯৬ সালে পুরো দেশকে কাঁদিয়েছিল—আজও যেন সেই রহস্যের কুয়াশা কাটেনি। তবে প্রায় ২৯ বছর পর, অবশেষে সেই “অপমৃত্যু” মামলা পেয়েছে নতুন রূপ—হত্যা মামলা হিসেবে!
রমনা থানার তদন্তে উঠে এসেছে এমন সব তথ্য, যা একসময় গুজব মনে হলেও এখন নতুন করে নাড়া দিচ্ছে দেশজুড়ে। আদালত ইতোমধ্যে সালমান শাহের সাবেক স্ত্রী সামিরা হকসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
পাশাপাশি আসামিদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, এবং এ বিষয়ে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে চিঠিও পাঠানো হয়েছে।
পুরনো জবানবন্দির ছায়া ফিরে এল!
১৯৯৭ সালে দেওয়া এক ১৬৪ ধারার জবানবন্দি এখন আবার আলোচনায়। সেই সময় আসামি রেজভী আহমেদ ফরহাদ আদালতে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, তা এখন শিহরণ জাগাচ্ছে দেশজুড়ে।
রেজভী বলেন—
“আমরাই সালমান শাহকে হত্যা করেছি, আর সেটাকে আত্মহত্যা হিসেবে সাজানো হয়েছিল।”
তার দাবি অনুযায়ী, এই হত্যার পেছনে ছিলেন সালমান শাহের স্ত্রী সামিরা হক, তার মা লতিফা হক লুসি, এবং পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্য।
হত্যার পেছনে ছিল ১২ লাখ টাকার চুক্তি, যার মূল উদ্যোক্তা ছিলেন সালমানের শাশুড়ি লুসি।
১২ লাখ টাকার প্রাণঘাতী চুক্তি!
রেজভীর বয়ানে জানা যায়, ১৯৯৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রাতে, গুলিস্তানের এক বারে এক ভয়ংকর বৈঠক হয়। উপস্থিত ছিলেন বাংলা সিনেমার খলনায়ক ডন, ডেভিড, ফারুক, জাভেদ ও রেজভী নিজে।
পরে আরও দুইজন যোগ দেন—সাত্তার ও সাজু।
সেই বৈঠকেই উচ্চারিত হয় মৃত্যুর দাম—১২ লাখ টাকা!
ফারুক হাতে তুলে দেখান ২ লাখ টাকা, বলে ওঠেন—
“এই টাকা দিয়েছে সামিরার মা, পুরো কাজের দাম ১২ লাখ।”
অল্প সময়ের মধ্যেই আরও ৪ লাখ টাকাও পৌঁছে যায়। পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়। প্রস্তুত রাখা হয় দড়ি, সিরিঞ্জ আর রিভলভার—সবকিছুই যেন এক সিনেমার মতো, কিন্তু এ গল্প ছিল বাস্তবের!
মৃত্যুর আগের রাত: নায়ককে ঘিরে ছায়া নেমে আসে
রেজভীর বর্ণনায়, ৫ সেপ্টেম্বর রাত আড়াইটায় ডন, ডেভিড, ফারুক ও আজিজ মোহাম্মদ ভাই সালমান শাহের বাসায় প্রবেশ করেন। তখন সালমান ঘুমিয়ে ছিলেন।
রেজভীর দাবি-
সামিরা নিজ হাতে সালমানের মুখে ক্লোরোফর্ম দেন, যাতে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন।
কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরলে ধস্তাধস্তি শুরু হয়, আর তখনই আজিজ ভাই নির্দেশ দেন ইনজেকশন পুশ করতে।
এরপর- নীরবতা। নায়কের নিথর দেহ ঝুলিয়ে রাখা হয় সিলিং ফ্যানে। সাজানো হয় ‘আত্মহত্যা’র দৃশ্য। সেই সময় উপস্থিত ছিলেন সামিরা, তার মা লুসি, ও আত্মীয়া রুবি।
২৫ বছরের এক রহস্যের পরিসমাপ্তি কি তবে শুরু হলো?
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর, মাত্র ২৫ বছর বয়সে সালমান শাহর মৃত্যুতে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল গোটা দেশ।
বছরের পর বছর তদন্তে এই মৃত্যু ‘অপমৃত্যু’ বলে ঘোষিত হয়, কিন্তু ভক্তদের মন থেকে প্রশ্নটা কখনও মুছে যায়নি- “আসলে কী হয়েছিল?”
আজ, প্রায় তিন দশক পর, সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার নতুন পথ খুলেছে।
এই মামলায় এখন মোট ১১ জন আসামি, যার মধ্যে রয়েছেন-
সামিরা হক, লতিফা হক লুসি, আজিজ মোহাম্মদ ভাই, ডন, ডেভিড, জাভেদ, ফারুক, রুবি, সাত্তার, সাজু এবং রেজভী আহমেদ ফরহাদ।
শেষ প্রশ্ন: সত্যি কি অবশেষে প্রকাশ পাবে সালমান শাহ হত্যার আসল রহস্য?
দেশজুড়ে এখন একটাই প্রতিধ্বনি—
“নায়ক কি সত্যিই আত্মহত্যা করেছিলেন, নাকি এটি ছিল সিনেমার চেয়েও ভয়ংকর এক খুনের গল্প?”
সামিরা হক, লতিফা হক লুসি, আজিজ মোহাম্মদ ভাই, ডন, ডেভিড, জাভেদ, ফারুক, রুবি, সাত্তার, সাজু এবং রেজভী আহমেদ ফরহাদ।
শেষ প্রশ্ন: সত্যি কি অবশেষে প্রকাশ পাবে সালমান শাহ হত্যার আসল রহস্য?
দেশজুড়ে এখন একটাই প্রতিধ্বনি—
“নায়ক কি সত্যিই আত্মহত্যা করেছিলেন, নাকি এটি ছিল সিনেমার চেয়েও ভয়ংকর এক খুনের গল্প?”
