দিনে সাধু, রাতে বন উজাড়ের ‘মহানায়ক’ ইউনুস-আলমগীর!

গাজীপুর প্রতিনিধি:

​গাজীপুরের কালিয়াকৈর রেঞ্জের বোয়ালী বিট এখন যেন দুর্নীতির এক সিনেমার সেট। আর এই সিনেমার দুই প্রধান অভিনেতা হলেন বিট কর্মকর্তা মো. ইউনুস এবং তার বিশ্বস্ত সহযোগী আলমগীর হোসেন। দিনের আলোয় তারা আইনের রক্ষক সেজে বসে থাকেন, কিন্তু রাত নামলেই দুজনে মিলে হয়ে ওঠেন বন উজাড়ের ‘ভয়ংকর মহানায়ক’। বদলির গুঞ্জনকে কাজে লাগিয়ে এই জুটি এখন বেপরোয়া লুটপাটে মত্ত।

দিনে ‘সাধু’ আলমগীরের ঘুষ নাটক: "দুর্নীতি নেই, তবে টাকা নিন!"

​সাংবাদিকরা তথ্যের সন্ধানে বিট অফিসে গেলে মুখোমুখি হন সহযোগী আলমগীর হোসেনের সাথে। তার কথায় যেন মধু ঝরে, ভাবভঙ্গিতে মনে হয় তিনি ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানেন না।

​আলমগীর অত্যন্ত সাবলীলভাবে দাবি করেন, "আমাদের বিটে কোনো দুর্নীতি হচ্ছে না, সব নিয়ম মেনেই চলছে।"

​কিন্তু এই দাবির ঠিক পরেই তিনি সাংবাদিকদের পকেটে টাকা গুঁজে দেওয়ার চেষ্টা করেন। সাংবাদিকরা টাকা নিতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, "ভাই, টাকা নিতেই হবে। আপনার মতো অনেক প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা এসে টাকা নিয়েছেন। সবাই নিলে আপনি নেবেন না কেন?"

​সাংবাদিকদের পাল্টা প্রশ্ন:

সাংবাদিকরা তখন তাকে সরাসরি প্রশ্ন করেন, "ভাই, আপনি একটু আগেই বললেন এখানে কোনো দুর্নীতি হয় না। যদি দুর্নীতি নাই থাকে, তবে আমাদের কিসের টাকা দিচ্ছেন? মুখ বন্ধ রাখার জন্য?"

এই প্রশ্নে আলমগীর হোসেনের মুখে আর কোনো জবাব ছিল না। তার এই অযৌক্তিক ঘুষ সাধাই প্রমাণ করে—ডাল মে কুচ কালা হ্যায়!

রাতের আঁধারে দুই ‘মহানায়ক’ এর তান্ডব

​দিনে যারা সাধু সাজেন, অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে রাতের আঁধারে তাদের আসল রূপ। স্থানীয় সূত্র ও অনুসন্ধানে জানা যায়, বিট কর্মকর্তা ইউনুস এবং আলমগীর হোসেন—এই দুই জুটির নেতৃত্বেই প্রতি রাতে চলে বন হত্যার মহোৎসব।

​যৌথ প্রযোজনা: ইউনুস অফিসে না থাকার ভান করেন, আর আলমগীর মাঠ পর্যায়ে তদারকি করেন। এই দুজনের ইশারাতেই ট্রাকে ট্রাকে সরকারি বনের গাছ পাচার হয়ে যায়।

​রাতের রাজা: এলাকাবাসীর মতে, "রাত গভীর হলেই এই দুইজন বনের ‘রাজকুমার’ বনে যান। তাদের হুকুমে করাত চলে, গাছ পড়ে, আর টাকা ঢোকে পকেটে।"

বিট কর্মকর্তার ‘পলায়ন’ ও বদলির অজুহাত

​এই সিন্ডিকেটের মূল মাস্টারমাইন্ড বিট কর্মকর্তা মোঃ ইউনুস নিজেকে আড়ালে রাখতে ওস্তাদ। সাংবাদিকরা তার সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে তিনি ফোন রিসিভ করেন না, অচেনা নম্বর দেখলেই কেটে দেন।

​এ বিষয়ে আলমগীর হোসেন দম্ভ করে বলেন, "স্যার এখান থেকে বদলি হয়ে যাবেন, নতুন স্যার আসবেন। তাই যাওয়ার আগে তিনি কোনো সাংবাদিকের সাথে কথা বলবেন না।" মূলত বদলির আগে শেষবারের মতো বন চেটেপুটে খেতেই তাদের এই চোর-পুলিশ খেলা।

ভোররাতের ধাওয়া ও প্রমাণের পাহাড়

​সাংবাদিকরা কেবল কথার ওপর ভিত্তি না করে সরেজমিনে ভোররাতে অভিযানে যান।

​রক্তাক্ত বন: দেখা যায়, একটার পর একটা বাগান থেকে মোটা ও দামি গাছগুলো কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

​পলায়ন: সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে শ্রমিকরা কাজ ফেলে পালিয়ে যায়।

​রাস্তায় প্রমাণ: ফেরার পথে রাস্তায় দেখা যায় কাঠ বোঝাই গাড়ি, যা কোনো বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই পাচার করা হচ্ছিল আশেপাশের অবৈধ স’মিলগুলোতে।

শেষ কথা

​বোয়ালী বিটের এই ‘ইউনুস-আলমগীর’ জুটির তান্ডব এখনই থামানো না গেলে গাজীপুরের মানচিত্র থেকে এই বনাঞ্চল চিরতরে হারিয়ে যাবে। এলাকাবাসী অবিলম্বে এই দুই দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে কঠোর তদন্ত ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।