বিএনপি-জামায়াতের ছত্রছায়ায় সদর্পে নিষিদ্ধ রাবি ছাত্রলীগ নেতা

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, রাবি:

ত্রাসের রাজত্বের নায়ক নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখার সাবেক নেতা আকিব ইমাম রাসেলের ঢাল এখন বিএনপি-জামায়াত। অভিযোগ উঠেছে টাকার বিনিময়ে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় তিনি সদর্পে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন এবং শিক্ষার্থী ও বিরোধী মতের মানুষদের দিচ্ছেন দেখে নেওয়ার হুমকি। অন্যদিকে নানাবিধ অপরাধের সত্যতা থাকলেও তার বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে না কোনো আইনগত ব্যবস্থা।

অভিযুক্ত এ সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আকিব বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের সহ-সভাপতি ছিলেন। তার বাড়ি রাজশাহীর কর্ণহার থানার ধর্মহাটা গ্রামে। তিনি স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা আসাদুর রহমানের (৬১) ছেলে এবং আওয়ামীলীগের সাবেক সংসদ সদস্য আয়েনউদ্দীনের অনুসারী।

অনুসন্ধানে জানা যায়, আওয়ামীলীগের সময়ে এলাকায় ব্যাপক প্রতাপশালী ছিল আকিব। নিজের বাবা ও সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন তিনি। দখল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মারধর, আত্মসাতে ছিল তার ব্যাপক উৎকর্ষ। এমন কি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রজনতার বিরুদ্ধে সম্মুখ সারিতে থেকে হামলা চালান এই নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা। দেন ০৫ আগস্টে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার নেতৃত্ব।

স্থানীয়রা জানান, তাদের প্রভাব এতটাই প্রবল ছিল যে, কেউ প্রতিবাদ করলেই হুমকি ও হয়রানির শিকার হতেন। প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় তারা এলাকায় দাপটের সঙ্গে অবস্থান বজায় রেখেছেন।

এখানেই শেষ নয়, খোঁজ নিতে বেরিয়ে আসে আরো গুরুতর অভিযোগ। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার নেতৃত্বাধীন দলবল হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ভোটকেন্দ্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করে সেন্টার দখলের অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় ভোটাররা দাবি করেন, সেদিন জোরপূর্বক ‘নৌকা’ প্রতীকে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়।

বিএনপি-জামায়াতের ছত্রছায়ায় সদর্পে নিষিদ্ধ রাবি ছাত্রলীগ নেতা

সাম্প্রতিক আকিব ইমামকে টাকার প্রভাব খাটিয়ে স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের খবর পাওয়া গেছে। ফলে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকছেন সদর্পে। বিগত দিনের অপরাধকর্মের শাস্তি থেকে রক্ষা পাওয়ার এ কৌশল কাজে লাগিয়ে আকিব এখন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তোভুগী বলেন, ওদের অত্যাচার কঠিন অত্যাচার তা সহ্য করার মতো না। ওদের তাণ্ডবে এলাকায় থাকা কঠিন। এলাকার জমি জায়গা বাপ-বেটা দখল করে খায় গোটা এলাকায় জানে। বিভিন্ন ধরণের ক্ষয়ক্ষতি করেছে যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। এতো নির্যাতন করেছে, সে কথা বলতে নিজের কাছেই খারাপ লাগে। এখনো আগের মতোই দাপটে চলছে সে। বিএনপি-জামায়াত নেতারা টাকা খেয়ে শেল্টার দিচ্ছে। আমার জানতে ইচ্ছে করে আওয়ামীলীগ-ছাত্রলীগ এতো খুন-গুম করার পরও কিভাবে এখনো আগের মতোই দাপটে চলে। দখল দারিত্ব এখনো চালায়? কেন তাদেরকে শেল্টার দেওয়া হচ্ছে? টাকায় কি সব? নাকি ভোটের জন্য অপরাধীদের ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে?

বিরোধী মতের হওয়ায় মামলা-হামলার মাধ্যমে হয়রানী করার বিষয়ে মুখ খোলেন আরেক ভুক্তোভুগী। তিনি বলেন, আমিসহ এলাকার শত শত মানুষ চরমভাবে হয়রানী হয়েছি। বাড়িতে থাকা দুঃস্বপ্ন করেছিল আকিব, তার বাবা ও সাঙ্গপাঙ্গরা। অত্যন্ত ব্যথিত হই যখন দেখি সদর্পে ফিরে এসেছে এমন অপরাধীরা। এবং টাকার বিনিময়ে তাদেরকে সমর্থন দিচ্ছে তাদের কাছেই নির্যাতত বিএনপি জামায়াত নেতারা। এদের বিচার হওয়া দরকার। প্রশাসনের দৃষ্টি আকষর্ণ করছি। তবে পরিচয় প্রকাশিত হলে চরম নিরাপত্তা ঝুকির কথা জানিয়ে পরিচয় গোপন রাখার শর্ত দেন তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, রাজনৈতিক ছত্রছায়া ও প্রশাসনিক অবহেলার কারণেই আকিব ইমাম এখনো আইনের বাইরে রয়ে গেছেন। তারা বলেন, তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

তারা আরও আশঙ্কা করছেন যে, রাজনীতির নামে এই ধরণের দাপটবাজি, প্রভাব খাটানো ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে এখনই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি, নতুবা সমাজে অপরাধীদের দৌরাত্ম্য আরও বাড়বে।

ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি হাজী জাইদুর রহমান আকিবের পুরো বংশ বিএনপি জানিয়ে বলেন, আকিবের বাবা এলাকার প্রভাবশালী মানুষ এটা সত্যি কিন্তু ওদের পুরো বংশ বিএনপি করে। তবে আওয়ামীলীগের সময়ে চাপে পড়ে, ব্ল্যাক মেইলের স্বীকার হয়েছে ওদের সাথে থাকতো। কিন্তু ওরা কোনো অন্যায় অপরাধ কখনো করেনি।

আকিব ছাত্রলীগ নেতা ছিল বিষয়টি তিনি জানেন উল্লেখ করে বলেন, রাসেল খুব ভালো ছেলে। ও ছাত্রলীগ করতো আমি জানি না। ও কোনো অন্যায় করেনি, সমস্যাও করেনি।

স্থানীয় জামায়াত নেতা আতাউর রহমান বলেন, "আকিব ও তার লোকজন আমাদেরকে এবং এলাকার মানুষদের অনেক জ্বালিয়েছে। ওরা এখনো আগের মতোই চলছে। ওদেরকে বিএনপির নেতারা শেল্টার দিচ্ছে। আমরা যতদূর শুনেছি টাকা পয়সা, কাজ-কামের ভাগ দিচ্ছে'। ওয়ার্ড বিএনপির জাইদুর রহমান, রানা, মুজাহিদ মাস্টারসহ অনেকেই তাদেরকে নিরাপত্তা বলায়ে রেখেছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

জামায়াত শেল্টার দিচ্ছে কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, জামায়াত তাদেরকে শেল্টার দিচ্ছে না। এটা ভূয়া অভিযোগ। তবে জামায়াত তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি এবং ভোটের জন্য তারা চুপ আছেন বলেও মন্তব্য করেন এই নেতা।

এবিষয়ে কথা বলতে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা আকিব ইমামের সাথে বারংবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।