নীলফামারী: করোনা ভাইরাস এর প্রাদুর্ভাব রোধে সারা দেশের ন্যায় লকডাউনের কবলে উত্তরের জেলা নীলফামারী। উচ্চবিত্ত, নিম্নবিত্ত আর মধ্যবিত্তদের বসবাস এ জেলায়। চলমান এ লকডাউনে উচ্চবিত্তরা লাক্সারী দিন যাপন করলেও, সি ত অর্থ শেষ করে নাবিশ্বাস উঠেছে অনেক গৃহবন্দী কর্মহীন নিম্ন বিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের। সরকারী ও বেসরকারী সংস্থার পক্ষ থেকে নিম্ন বিত্তরা খাদ্য সহায়তা পেলেও, মধ্যবিত্তরা দিন যাপন করছেন চরম সংকট এর মধ্যদিয়ে। চক্ষু লজ্জার ভয়ে ভীত এসব মধ্যবিত্তরা কাউকে কিছু বলতে না পারলেও, তাঁদের চাপা কান্নাও যেন চোখে পড়ছে না করোরই।
কথা হয়, জেলা সদরের আল-হেলাল একাডেমী স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা শরিফা জাহান’র সাথে, তিনি বলেন, “মাননীয় সরকার প্রধানের নির্দেশনায় করোনা ভাইরাসের সংক্রমন ঝুঁকি এড়াতে চলমান লকডাউনে রয়েছে সারা দেশের ন্যায় নীলফামারী জেলা। গত প্রায় দু’মাস ধরে সি ত অর্থে পরিবার পরিচালনা করছিলাম। গত ফেব্রুয়ারী মাসে একটি বেসরকারী ব্যাংক থেকে সিএনজি ক্রয়ের জন্য এক লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। সিএনজি না কিনে, সেটি দিয়েও সংসার পরিচালনা করতে হচ্ছে। কিন্তু সেটিও প্রায় শেষ। আমার হ্যাসব্যান্ড ব্যবসা করে। লকডাউনের ফলে তাঁরও (হ্যাসব্যান্ড) এর ব্যবসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মাঝে মাঝে অর্ধাহারেও দিনযাপন করতে হচ্ছে আমাদের।
“নির্ধারিত মাসিক কোন বেতন না থাকলেও মামলা প্রতি যে আয় হতো তা দিয়েই চলতো তাঁদের সরকার। গত ২৭ মার্চ থেকেই সারা দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে কোর্ট বন্ধ থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন” বলে অশ্রুজল চোখে জানালেন নীলফামারী জজ কোর্টের কয়েকজন আইনজীবী সহকারীরা”।
সদরের রামগঞ্জ এলাকার গার্মেন্টস ব্যবসায়ী আব্দুর রউফ জানান, “চলমান লকডাউনের ফলে ঘরেই অবস্থান করছেন মানুষজন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রায় বন্ধের উপক্রম হয়েছে। সি ত অর্থেই যোগান দিচ্ছিলাম পরিবারের খাদ্য সহায়তা। কিন্তু সেটিও প্রায় শেষ। আত্মীয় স্বজনের সহযোগিতায় চলছি আমরা। চক্ষু লজ্জার ভয়ে কাউকে কিছু বলতে না পারলেও, কারোর চোখ যেন পড়ছে না আমাদের দিকে”।
এদিকে, সদরের পলাশবাড়ী বাজারের ষ্টুডিও ও ফটোকপি ব্যবসায়ী ইব্রাহীম সুজন জানান, “করোনার সংক্রমন ঠেকাতে জেলাকে ঘোষণা করা হয়েছে লকডাউন। উচ্চ বিত্তরা রাজকীয় ভাবে দিন যাপন করলেও, চরম বিপাকে পড়েছে নিম্ন মধ্যবিত্তরা। অনেকেরই বন্ধ হয়ে গেছে, রুজি-রোজগার। নিভৃতে চাপা কান্না যেন আমাদের একমাত্র সঙ্গী”।
জেলা জুড়েই রয়েছে এমন হাজার হাজার বেসরকারী স্কুল শিক্ষিকা, ব্যবসায়ী ও আইনজীবী সহকারীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার গৃহবন্দী অসহায় মধ্যবিত্তরা। যাঁদের অনেকেই দেখা গেছে, গোপনে ওএমএস’র লাইনে দাড়িয়ে স্বল্প দামে চাল ও আটা সংগ্রহ করতে। চক্ষু লজ্জার খাতিরে সেপথও তাঁদের এখন বন্ধ। চলমান লকডাউনে গৃহবন্দী কর্মহীন হয়ে পড়া এসব মানুষদের নীরব যন্ত্রণা যেন দেখছে না কেউই, কেউ শুনতে পাচ্ছে না তাঁদের চাপা কান্না। করোনায় নয়, বরং না খেয়েই মরতে হবে তাঁদের বলে মনে করছেন তাঁরা। ফলে অনেকেই চাতক পাখির মত তাকিয়ে রয়েছেন সরকারের সুদৃষ্টির দিকে।