
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তি অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান। শুধু চলচ্চিত্রেই নয়, নাটকের পর্দায়ও সমানভাবে জনপ্রিয় তিনি। এছাড়া একাধারে তিনি নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার, কাহিনিকার, সংলাপ রচয়িতা ও গল্পকার। আজ ১০ সেপ্টেম্বর সোমবার বহুগুণে গুণান্বিত এই শোবিজের খ্যাতিমান এই ব্যক্তিত্বের ৭৯তম জন্মদিন।
এবারের জন্মদিনও তিনি পরিবারের সঙ্গেই কাটাচ্ছেন। ১৯৪১ সালের আজকের দিনে তিনি নোয়াখালীর দৌলতপুরে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার ভোলাকোটের বড় বাড়ি আর ঢাকা বসবাস করছেন পুরান ঢাকার দেবেন্দ্রনাথ দাস লেন এলাকায়।
এটিএম শামসুজ্জামান পড়াশোনা করেছেন ঢাকার পগোজ স্কুল, কলেজিয়েট স্কুল, রাজশাহীর লোকনাথ হাই স্কুলে। পগোজ স্কুলে তার বন্ধু ছিল আরেক অভিনেতা প্রবীর মিত্র। তিনি ময়মনসিংহ সিটি কলেজিয়েট হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। তারপর জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন।
এটিএম-এর পিতা নূরুজ্জামান ছিলেন নামকরা উকিল। তিনি শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের সঙ্গে রাজনীতি করতেন। তার মায়ের নাম নুরুন্নেসা বেগম। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে শামসুজ্জামান ছিলেন সবার বড়।
১৯৬১ সালে পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ চলচ্চিত্রে সহকারি পরিচালক হিসেবে চলচ্চিত্র জীবন শুরু করেন। প্রথম কাহিনি ও চিত্রনাট্য লিখেছেন ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রের জন্য। পরিচালক ছিলেন নারায়ণ ঘোষ মিতা। আর এই ছবিটির মাধ্যমেই অভিনেতা ফারুকের চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়।
এ পর্যন্ত শতাধিক চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য ও কাহিনী লিখেছেন তিনি। প্রথমদিকে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্র জীবন শুরু করলেও ১৯৬৫ সালে ভিন্ন ধারার অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্রে আগমন তার। ১৯৭৬ সালে চলচ্চিত্র পরিচালক আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমণি’ চলচ্চিত্রে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করে আলোচনায় আসেন এটিএম শামসুজ্জামান। সে ধারাবাহিকতায় একের পর এক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন এই কিংবদন্তি।
১৯৮৭ সালে কাজী হায়াত পরিচালিত দায়ী কে? চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। এরপর ১৯৯৯ সালে ‘ম্যাডাম ফুলি’, ২০০১ সালে ‘চুড়িওয়ালা’ এবং ২০০৯ সালে ‘মন বসেনা পড়ার টেবিলে’ সিনেমাতে অভিনয়ের জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
সর্বশেষ ২০১২ সালেরেদওয়ান রনি পরিচালিত চোরাবালিতে অভিনয় করেন তিনি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব-চরিত্রে অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। ২০১৫ সালে পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা একুশে পদক। বর্তমানে চলচ্চিত্রে কাজ না করলেও নাটকে নিয়মিত কাজ করছেন জনপ্রিয় এই অভিনেতা।
এবারের জন্মদিন উপলক্ষে এটিএম শামসুজ্জামান বলেন, ‘জন্মদিন পরিবারের সঙ্গেই কাটাচ্ছি। আসলে জন্মদিন এলে মৃত্যুর কথেই বেশি করে মনে পড়ে যায়। জন্মদিন আসা মানেই মুত্যুর দিকে আরও একধাপ এগিয়ে যাওয়া। অর্থাৎ জীবন থেকে আরও একটি বছর চলে যাওয়া। অবশ্য এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার আমার মৃত্যু নিয়ে গুজব সৃষ্টি করা হয়েছে। জন্মদিনে সবার কাছে দোয়া চাই। আমার জন্য সবাই প্রাণ ভরে দোয়া করবেন আল্লাহ যেন সুস্থ রাখেন।’
এটিএম শামসুজ্জামান অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- ‘লাঠিয়াল’, ‘নয়নমনি’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘অশিক্ষিত’, ‘সূর্যদীঘল বাড়ি’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘লাল কাজল’, ‘পুরস্কার’, ‘দায়ী কে?’, ‘দোলনা’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘অজান্তে’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘চুড়িওয়ালা’, ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’, ‘শাস্তি’, ‘মোল্লা বাড়ির বউ’, ‘হাজার বছর ধরে’, ‘চাঁদের মতো বউ’, ‘মন বসেনা পড়ার টেবিলে’, ‘এবাদাত’, ‘পরান যায় জ্বলিয়ারে’, ‘কুসুম কুসুম প্রেম’, ‘গেরিলা’, ‘লাল টিপ’, ‘চোরাবালি’, ‘পাংকু জামাই’।
তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য টিভি নাটক হচ্ছে- ‘রঙের মানুষ’, ‘ভবের হাট’, ‘ঘর কুটুম’, ‘বউ চুরি’, ‘নোয়াশাল’, ‘শতবর্ষে দাদাজান’।