রোজার আগ পর্যন্ত স্বস্তি ছিল কেবল সবজির বাজারে।কিন্তু রোজা শুরুর প্রথম দিন থেকেই পাল্টে যায় সবজির বাজারের চিত্রও। মাত্র এক দিনের ব্যবধানে বাজারে বেগুন, শসা, টমেটো, কাঁচা মরিচ ও ধনেপাতাসহ অধিকাংশ সবজির দাম দ্বিগুণ-তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে বেগুন ও শসার তিনগুণ দাম বেড়ে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে।

অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে সবজির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ ও নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট আরও বেড়েছে। অন্যদিকে কৃষি বিপণন অধিদফতর ছোলা ও চিনিসহ যে ৬টি পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছিল রোজার এক দিন আগে বাজারে সে দামে মিলছে না কোনোটাই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি বিপণন অধিদফতর বাজার মনিটরিংয়ের কথা বললেও বাজারে এ দুই সংস্থার কোনো টিমকে দেখা যাচ্ছে না।

এক মাস আগে বেগুনের কেজি ছিল ৪০-৫০ টাকা। রোজার প্রথম দিনই দ্বিগুণ দাম বেড়ে বেগুনের কেজি ১০০ টাকা হয়ে যায়। শুক্রবার তো রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজারে ১২০ টাকা কেজিতেও বেগুন বিক্রি হতে দেখা গেছে। এক মাস আগে শসার কেজি ছিল ৩৫-৪০ টাকা।
শুক্রবার রাজধানীর বাজারে এক কেজি শসা বিক্রি হয়েছে ১০০-১২০ টাকায়। এক মাস আগে প্রতিকেজি টমেটোর দাম ছিল ২০-২৫ টাকা, শুক্রবার বিক্রি হয়েছে ৫০-৬০ টাকায়। এক মাস আগে ধনেপাতার কেজি ছিল ১২০-১৫০ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৩০০ টাকায়। এক মাস আগে এক কেজি কাঁচা মরিচের দাম ছিল ৬০ টাকা, এখন হয়েছে ৮০-১০০ টাকা। এক মাস আগে মাঝারি মানের এক হালি লেবুর দাম ছিল ২০-২৫ টাকা। এখন সেটির দাম ৫০-৬০ টাকা। আর সবচেয়ে ভালো মানের এক হালি লেবুর দাম তো ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে। রোজায় ইফতারির সময় কাঁচাবাজারের মূলত এসব সবজির দরকার পড়ে, তাই এগুলোর দাম বেড়েছে। তবে এসব সবজির দাম বৃদ্ধির প্রভাব বাজারের অন্যান্য সবজির ওপরও পড়েছে। যেমন এক মাস আগে এক পিস লাউ বিক্রি হয়েছে ৩৫-৪০ টাকায়, এখন তার দাম ৮০-৯০ টাকা। তা ছাড়া পটোল, ঢেঁড়শ, গাজর, করোলা ও বরবটিসহ অন্যান্য সবজির দামও কেজিতে বেড়েছে ১০-২০ টাকা করে।

রোজার শুরুতেই আরেক দফা বেড়েছে ছোলা, চিনি, খেজুর, সব ধরনের ডাল, বেসন, গুঁড়ো দুধ ও প্যাকেটজাত তরল দুধসহ এসব পণ্যের দাম। এসব পণ্যে গত এক মাসের তুলনামূলক চিত্র দেখলে দেখা যাবে এক মাস আগে ছোলার কেজি ছিল ৬০-৬৫ টাকা, রোজা আসায় কেজিতে ২০ টাকারও বেশি বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৮০-৯০ টাকা। এক মাস আগে চিনির কেজি ছিল ৬০-৬৫ টাকা, এখন হয়েছে ৭৫-৮০ টাকা। সরু দানার ভালো মানের মসুর ডাল এক মাস আগে ছিল ৯০-১০০ টাকা, এখন হয়েছে ১১০-১২০ টাকা, বেসনের দাম এক মাস আগে ছিল ৮০-৯০ টাকা, এখন হয়েছে ১১০-১২০ টাকা। এক মাস আগে ডানোর এক কেজি গুঁড়ো দুধের দাম ছিল ৬৩০ টাকা, এখন হয়েছে ৬৫০ টাকা, এক কেজির ডিপ্লোমার দাম ছিল ৬১০ টাকা, এখন হয়েছে ৬৪৫ টাকা। আর এক মাস আগে প্যাকেটজাত তরল দুধের দাম ছিল ৭০-৭৫ টাকা, এখন হয়েছে ৮০-৮৫ টাকা।
চালের বাজারে নতুন করে দাম বেড়েছে রোজার ঠিক দুদিন আগে থেকে। বাজারে এখন প্রতিকেজি বিআর-২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫২ টাকা, মিনিকেট ৬৮-৭০ টাকা, নাজির ৭০-৭২ টাকা, স্বর্ণা চাল ৫২-৫৪ টাকা, পোলাও চাল ১০০-১২০ টাকা। খোলা ভোজ্য তেলের লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৩৫-১৩৯ টাকা। এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকায়। হাঁসের ডিমের দাম কমে ডজন এখন ১৩৫ টাকা। দেশি মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা। প্রতি কেজিতে ২০ টাকা দাম কমে বিক্রি হচ্ছে সোনালি (কক) মুরগি ২৭০-২৮০ টাকা ও ব্রয়লার মুরগি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫-১৫০ টাকায়। লেয়ার মুরগি কেজি ২১০-২২০ টাকা।

বাজারে অপরিবর্তিত আছে গরু ও খাসির মাংস ও মসলাসহ অন্যান্য পণ্যের দাম। বাজারে প্রতিকেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৭৫০ টাকা, বকরির মাংস ৭০০-৭৫০ টাকা ও গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ টাকায়।
বাজারে প্রতিকেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৩৫০ টাকায়, মাগুর মাছ ৬০০ টাকা, প্রতি এক কেজি শিং মাছ (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪৫০, মৃগেল ১১০-১৫০, পাঙাস ১২০-১৫০, ইলিশ প্রতিকেজি (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৮৫০-১০০০, চিংড়ি প্রতিকেজি ৫০০-৬০০, বোয়ালমাছ প্রতিকেজি ৪০০-৫০০, কাতল ২৫০-৩৮০, ফলি মাছ ৩০০-৪০০, পোয়া মাছ ২০০-২৫০ ও পাবদা মাছ ২৫০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।