বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তি ও গবেষণার যুগে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে বলেছেন, মানুষের সুস্থ থাকার ক্ষেত্রে রোজার ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। ৩০ দিনের রোজায় মানুষের শরীরে স্বাস্থ্যগত কি কি প্রভাব পড়ে, একটি গবেষণায় তা তুলে ধরা হয়েছে।
রোজার প্রথম দিনগুলো সবচেয়ে কষ্টকর: সাধারণত আমরা যেসব খাবার খাই, পাকস্থলীতে তা পুরোপুরি হজম হতে এবং এর পুষ্টি শোষণ করতে আমাদের শরীর অন্তত আট ঘন্টা সময় নেয়। তাই শেষবার খাবার গ্রহণের পর আট ঘণ্টা পার না হওয়া পর্যন্ত মানুষের শরীরে উপোস বা রোজার প্রভাব পড়ে না।
এই খাদ্য যখন পুরোপুরি হজম হয়ে যায়, তখন মানুষের শরীর যকৃৎ এবং মাংসপেশীতে সঞ্চিত থাকে যে গ্লুকোজ, সেটা থেকে শক্তি নেয়ার চেষ্টা করে।
শরীর থেকে যখন এই চর্বি খরচ হওয়া শুরু হয়, তা আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।
তবে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। যেহেতু রক্তে সুগার বা শর্করার মাত্রা কমে যায়, সে কারণে হয়তো কিছুটা দুর্বল এবং ঝিমুনির ভাব আসতে পারে।
এছাড়া কারও কারও ক্ষেত্রে মাথাব্যাথা, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব বা নিশ্বাসে দুর্গন্ধ হতে পারে। এ সময়টাতে মানুষের শরীরে সবচেয়ে বেশি ক্ষুধা লাগে।
৩ থেকে ৭ রোজা: প্রথম কয়েকদিনের পর আপনার শরীর যখন রোজায় অভ্যস্ত হয়ে উঠবে, তখন শরীরে চর্বি গলে গিয়ে তা রক্তের শর্করায় পরিণত হবে। কিন্তু রোজার সময় দিনের বেলায় যেহেতু কিছুই খাওয়া যায় না, তাই রোজা ভাঙ্গার পর অবশ্যই সেটার ঘাটতি পূরণের জন্য প্রচুর পানি পান করতে হবে। না হলে মারাত্মক পানি-শূন্যতায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ সময় খাবারের ক্ষেত্রে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা এবং চর্বি জাতীয় খাবার খেতে হবে।
৮ থেকে ১৫ রোজা: এই পর্যায়ে এসে রোজার সঙ্গে শরীর অনেকটা মানিয়ে নেয়।
ক্যামব্রিজের এডেনব্রুকস হাসপাতালের 'অ্যানেসথেসিয়া অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিনের' কনসালট্যান্ট ড: রাজিন মাহরুফ বলেন, এর অন্যান্য সুফলও আছে।
‘সাধারণত দৈনন্দিন জীবনে আমরা অনেক বেশি ক্যালরিযুক্ত খাবার খাই এবং এর ফলে আমাদের শরীর অন্য অনেক কাজ ঠিকমত করতে পারে না, যেমন ধরুণ শরীর নিজেই নিজেকে সারিয়ে তুলতে পারে।’
‘কিন্তু রোজার সময় যেহেতু আমরা উপোস থাকছি, তাই শরীর তখন অন্যান্য কাজের দিকে মনোযোগ দিতে পারে। কাজেই রোজা কিন্তু শরীরের জন্য বেশ উপকারী। এটি শরীরের ক্ষত সারিয়ে তোলা বা সংক্রমণ রোধে সাহায্য করতে পারে।’
১৬ থেকে ৩০ রোজা: রমজান মাসের দ্বিতীয়ার্ধে রোজাদারের শরীর পুরোপুরি রোজার সঙ্গে মানিয়ে নেবে।
আপনার শরীরের পাচকতন্ত্র, যকৃৎ, কিডনি এবং দেহত্বক এখন এক ধরণের পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাবে। সেখানে থেকে সব দূষিত বস্তু বেরিয়ে শরীর যেন শুদ্ধ হয়ে উঠবে।
ড: মাহরুফ বলেন, ‘এসময় শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তাদের পূর্ণ কর্মক্ষমতা ফিরে পাবে। আপনার স্মৃতি এবং মনোযোগের উন্নতি হবে এবং আপনি যেন শরীরে অনেক শক্তি পাবেন’।
‘শরীরের শক্তি জোগানোর জন্য আপনার আমিষের ওপর নির্ভরশীল হওয়া ঠিক হবে না। যখন আপনার শরীর ক্ষুধার্ত থাকছে তখন এটি শক্তির জন্য দেহের মাংসপেশীকে ব্যবহার করছে। এবং এটি ঘটে যখন একটানা বহুদিন বা কয়েক সপ্তাহ ধরে আপনি উপোস থাকছেন বা রোজা রাখছেন।’
‘যেহেতু রোজার সময় কেবল দিনের বেলাতেই না খেয়ে থাকতে হয়, তাই রোজা ভাঙ্গার পর শরীরের চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট খাবার এবং তরল বা পানীয় গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। এটি আমাদের মাংসপেশীকে রক্ষা করছে এবং একই সঙ্গে আমাদের আবার ওজন কমাতেও সাহায্য করছে।’
তাহলে রোজা রাখা কি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো?
ড. মাহরুফ বলেন, রোজা রাখা শরীরের জন্য ভালো কারণ আমরা কী খাই এবং কখন খাই সেটার ওপর আমাদের মনোযোগ দিতে সাহায্য করে।
ড. মাহরুফের পরামর্শ হচ্ছে, রমজান মাসের পর মাঝেমধ্যে অন্য ধরনের উপোস করা যেতে পারে। যেমন ৫:২ ডায়েট (পাঁচদিন কম খেয়ে দুদিন ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করা)। যেখানে কয়েকদিন রোজা রেখে আবার স্বাস্থ্যসম্মতভাবে খাওয়া-দাওয়া করা যেতে পারে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা