শিরোনাম

6/recent/ticker-posts

বছর পর ফিরে দেখা রক্তাক্ত জুলাই


আজ জুলাই মাসের ১ তারিখ। মাসটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য বাংলাদেশের ইতিহাসে অনেক, যা গত জুলাইয়ের আগেও ছিল না। কারণ, জুলাইয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গণঅভ্যুত্থান, বিপ্লব। যে অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পতন ঘটে ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের। ক্ষমতাচ্যুত হয় ফাঁকা মাঠে গোলের নির্বাচনে জেতা, ‘আমি-ডামি ভোটে’ নির্বাচিত সরকারের।

যদিও অভ্যুত্থানের শুরুতে সরকার পতনের লক্ষ্য নিয়ে শুরু হয়নি। ছিল শুধু দেশ থেকে বৈষম্য দূর করার আন্দোলন, কোটা সংস্কারের আন্দোলন।

২০২৪ এর ৫ জুন বিচারপতি কেএম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। সেই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতেই কোটা বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। তখন ছাত্রসমাজের দাবিটা ছিল ভীষণ সাধারণ- ৫৫ ভাগ কোটার গ্রাস থেকে বেরিয়ে মেধার ভিত্তিতে চাকরি পাওয়া।

গত ১ জুলাই শিক্ষার্থীদের ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন’ ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’ রূপ নেয়। এটিই ছিল প্রায় ১৬ বছরের আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সূচনাবিন্দু। তখন সেটা বুঝতে পারেনি হাসিনার সরকার। তাইতো এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের রাজাকার তকমা দেন খোদ শেখ হাসিনা নিজেই।

কোটাবিরোধী আন্দোলনকে ক্ষণে-ক্ষণে কটাক্ষ করেই ক্ষান্ত হননি তৎকালীন সরকার প্রধান। বল প্রয়োগ, গুম, খুন... সব কিছু করে ছাত্র-ছাত্রীদের এমন খাদের কিনারায় দাঁড় করিয়েছিলেন, যেখানে তাদের পথ খোলা ছিল একটাই- 'মুক্তি অথবা মৃত্যু'।

গোটা দেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সেই উত্তাপে ঘি ঢালেন তৎকালীন সড়ক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

তিনি লেলিয়ে দেন ছাত্রলীগকে। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগসহ ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা হামলা চালায়। এতে আন্দোলন আরও বেগবান হয়। এর পরও সরকার চাইলে আন্দোলনকে থামিয়ে দিতে পারত।

তা না করে সরকারি বাহিনীর হাতে ঘটে হত্যাকাণ্ড। ১৬ জুলাই রংপুরে আবু সাঈদকে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। এ ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশ বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে। ছাত্রদের আন্দোলনে যোগ দেন সাধারণ জনতাও।

অতঃপর কোটাবিরোধী সংগ্রাম রূপ নেয় আওয়ামী ফ্যাসিবাদ পতনের আন্দোলনে। ১৬ বছরে সীমাহীন বৈষম্য-গুম-খুন-দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ জনতার স্রোত মিশে যায় রাজপথে। পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী নামিয়ে দিয়েও দমানো যায়নি মানুষের ক্ষোভ বিক্ষোভের আগুন।

শেষমেশ, ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়ে ১৮ ও ১৯ জুলাই ছাত্রজনতার ওপর চালানো হয় বর্বর হত্যাযজ্ঞ। কিন্তু, শোষকের বন্দুক থেকে যতই গুলি বেরিয়েছে, ততই ছড়িয়ে পড়েছে আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ। দফায়-দফায় দেয়া কারফিউ ভেঙে ছাত্র-শিক্ষক, কৃষক-শ্রমিক, পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, দলমত নির্বিশেষে পথে নামে সব শ্রেণীর মানুষ। আন্দোলন রূপ নেয় গণঅভ্যুত্থানে।

৩ আগস্ট ঢাকার শহীদ মিনার চত্বরে লাখো জনতার জমায়েত থেকে ঘোষণা আসে একদফা- শেখ হাসিনার পদত্যাগ। এরপর ৪ আগস্ট মরণকামড় দেয় আওয়ামী লীগ। পুলিশের সাথে অস্ত্র নিয়ে নেমে পড়েন তাদের নেতাকর্মীরা। দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে নজিরবিহীন সহিংসতা। শুধু একদিনে ঝরে যায় শতাধিক প্রাণ।

গোটা দেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সেই উত্তাপে ঘি ঢালেন তৎকালীন সড়ক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

তিনি লেলিয়ে দেন ছাত্রলীগকে। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগসহ ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা হামলা চালায়। এতে আন্দোলন আরও বেগবান হয়। এর পরও সরকার চাইলে আন্দোলনকে থামিয়ে দিতে পারত।ব্যাপক রক্তপাত ও প্রাণহানির পরও গদি ছাড়তে চাননি শেখ হাসিনা। ৫ আগস্ট ভোর থেকে জারি করা হয় কঠোর কারফিউ। কিন্তু, শত বাধার দেয়াল ভেঙে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখ-লাখ মানুষ এগিয়ে যায় গণভবনের দিকে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদন মতে, জুলাই অভ্যুত্থানে ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ শহীদ হয়েছেন। বিভিন্ন সংগঠনের মতে, শহীদের সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। এত রক্তের বিনিময়ে ৫ আগস্ট সফল হয় ছাত্র-জনতা। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে হেলিকপ্টারে দেশ ছেড়ে ভারতে পালান শেখ হাসিনা। তার পালানোর খবরে গা-ঢাকা দেন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিসহ বহু নেতা। হাসিনা সরকারের পতন ঘটার পর ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার।