
“Global Sumud Flotilla” নামে পরিচিত এক বৃহৎ মানবহিতৈষী নৌকাযাত্রা গাজার উপকূলের দিকে অগ্রসর হয় — লক্ষ্য ছিল ঐ অঞ্চলে অবরোধ ভাঙা ও সহায়তা পৌঁছে দেওয়া। ইসরায়েল ইতিমধ্যে জোরালো হুঁশিয়ারি ও নানা ধরনের সামরিক প্রস্তুতি ঘোষণা করেছিল, কিন্তু ফ্লোটিলার সদস্যরা তা উপেক্ষা করে তাদের যাত্রা চালিয়ে দেয়। এই সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে আন্তর্জাতিক আইন, মানবাধিকার, সংকটাপন্ন গাজার অবস্থা ও রাজনৈতিক চাপ।
ফ্লোটিলার সদস্যদের দাবি, তারা গাজার মানুষের কাছে প্রতীকী ও বাস্তব সহায়তা পৌঁছে দিতে চায়। অন্যদিকে ইসরায়েল স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, অবরুদ্ধ গাজায় কোনো নৌযান ঢুকতে দেওয়া হবে না।
বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার ভোরের মধ্যে ইসরায়েলি নৌবাহিনী ফ্লোটিলার অন্তত ১৩টি নৌকা আটক করেছে। আন্তর্জাতিক জলসীমায় অভিযান চালিয়ে এসব নৌকা দখলে নেওয়া হয়। আটক হওয়া নৌকাগুলোর যাত্রীদের মধ্যে সংসদ সদস্য, আইনজীবী, সাংবাদিক ও বিভিন্ন দেশের নাগরিক রয়েছেন। অনেককেই ইসরায়েলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং তাদের দ্রুত বহিষ্কারের প্রক্রিয়া চলছে।
ফ্লোটিলা সংগঠকরা অভিযোগ করেছেন, ইসরায়েলি বাহিনী জোর করে ক্যামেরা, মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল করে দেয়, যাতে ঘটনাগুলো বিশ্বের কাছে সরাসরি প্রচারিত না হয়। এমনকি কয়েকটি নৌকায় পানি কামান ও রাসায়নিক স্প্রে ব্যবহারের অভিযোগও উঠেছে।
ইসরায়েল বলছে, এ ধরনের নৌবহর অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করছে, যা তাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তাদের দাবি, মানবিক সহায়তার বিকল্প রুট ইতিমধ্যেই উন্মুক্ত রাখা হয়েছে, কিন্তু ফ্লোটিলা সংগঠকরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সরাসরি গাজার দিকে রওনা হয়েছে।
- ঘটনার পর ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
- কলম্বিয়া ইতিমধ্যেই ইসরায়েলের কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের বহিষ্কার করেছে।
- স্পেন, ইতালি, তুরস্ক ও মালয়েশিয়া ইসরায়েলের পদক্ষেপের কঠোর সমালোচনা করেছে।
- ইতালির শ্রমিক ইউনিয়ন সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ফ্লোটিলা আটক অভিযানের প্রতিবাদে।
- স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেছেন, “এই নৌবহর কোনো হুমকি নয়, বরং মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে চেয়েছিল। ইসরায়েলের উচিত ছিল তাদের নিরাপত্তা দেওয়া।”
বিভিন্ন দেশে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে—রোম, ব্রাসেলস, বার্লিন ও জেরুজালেমে মানুষ গাজামুখী ফ্লোটিলার প্রতি সংহতি জানিয়েছে।
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী কোনো রাষ্ট্রের সমুদ্রসীমা সাধারণত ১২ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত। ফ্লোটিলার দাবি, তারা আন্তর্জাতিক জলসীমায় ছিল, ফলে ইসরায়েলের এ হস্তক্ষেপ বেআইনি।
অন্যদিকে ইসরায়েল বলছে, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে তাদের এ ধরনের প্রতিরোধের অধিকার রয়েছে।
গাজায় এখনো চলছে মানবিক বিপর্যয়। খাদ্য, ওষুধ ও প্রয়োজনীয় সামগ্রীর অভাব চরমে। আন্তর্জাতিক মহল মনে করছে, এ ধরনের মানবিক বহর দমন শুধু সহায়তা পৌঁছানোর পথে বাধা নয়, বরং ইসরায়েলের ওপর কূটনৈতিক চাপ বাড়িয়ে দেবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ফ্লোটিলার ঘটনা আবারও প্রমাণ করল—গাজার অবরোধ শুধু মধ্যপ্রাচ্যের ইস্যু নয়, বরং আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ও মানবিক সংকটের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।