আরমান হোসেন

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট–ধোবাউড়া) আসনটি এবারও রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ঐতিহ্যগতভাবে বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই আসনে এবার ধর্মভিত্তিক ভোটের সমীকরণ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে।

এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব আলহাজ্ব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। এলাকায় তার রাজনৈতিক পরিচিতি, দীর্ঘদিনের তৃণমূল সংযোগ এবং দলীয় সাংগঠনিক ভিত্তি তাকে এখনো সবচেয়ে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে রেখেছে।

যদিও বিএনপির অন্য দুই মনোনয়ন প্রত্যাশী আফজাল এইচ খান ও সালমান ওমর রুবেল–এর সমর্থকদের মধ্যে শুরুতে কিছুটা অস্বস্তি ও বিরোধ লক্ষ্য করা গেছে, তবে দলীয় সূত্র অনুযায়ী নির্বাচন সামনে রেখে এই বিরোধ প্রশমিত হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সে কারণে বিএনপির ভোট বিভাজন বড় আকারে হওয়ার সম্ভাবনা আপাতত কম।

তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, যদি বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল পুরোপুরি নিরসন না হয় এবং তৃণমূলে এর প্রভাব পড়ে, তাহলে সেই সুযোগে সবচেয়ে বেশি লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীর।

এই আসনটিতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি। এলাকাজুড়ে রয়েছে বিপুল সংখ্যক কওমি মাদ্রাসা, মসজিদ, ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং তাবলিগ জামাতের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম। এসব কারণে ঐতিহ্যগতভাবে এখানে ইসলামি দলগুলোর একটি শক্ত ভোটভিত্তি রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ধর্মপ্রাণ ভোটারদের এই বড় অংশের কারণে এবারের নির্বাচনে ইসলামী দলগুলোর ভোট বাড়ার সম্ভাবনা বাস্তব।

এক্ষেত্রে সবচেয়ে সংগঠিত ও ধারাবাহিক শক্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

এই দলটি আশির দশক থেকেই এই অঞ্চলে নিয়মিত দাওয়াতি ও সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছে এবং ১৯৯৬ সাল থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নিয়মিত অংশগ্রহণ করে আসছে।

এর ফলে দলের একটি নিজস্ব, স্থায়ী এবং সচেতন ভোট ব্যাংক তৈরী হয়েছে, যা এই আসনে তাদের বড় শক্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন হাফেজ মাওলানা এডভোকেট মোঃ জিল্লুর রহমান, যিনি ইসলামী আইনজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। তিনি এলাকায় একজন পরিচিত মুখ, ধর্মপ্রাণ জনগোষ্ঠীর কাছে গ্রহণযোগ্য এবং তরুণ ভোটারদের একটি অংশে ইতোমধ্যে তার শক্ত অবস্থান তৈরি হয়েছে বলে স্থানীয় পর্যায়ে আলোচনা চলছে।

অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন মাহফুজুর রহমান মুক্তা এবং খেলাফত মজলিস থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন মাওলানা তাজুল ইসলাম। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—এই দুই দল এই এলাকায় সংসদ নির্বাচনে এবারই প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী দিয়েছে বলে রাজনৈতিক সূত্রগুলো জানাচ্ছে। ফলে সংগঠন ও ভোটব্যাংকের দিক থেকে তারা এখনো ইসলামী আন্দোলনের সমপর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি বলে অনেকের ধারণা।

এদিকে ইসলামী দলগুলোর মধ্যে সম্ভাব্য আসন সমঝোতার আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। যদি এই সমঝোতার মাধ্যমে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মৌলিক জোট প্রার্থী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন, তাহলে মাঠ পর্যায়ের অনেক ভোটারের সমর্থন একত্র হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে, যা এই আসনের নির্বাচনী ফলাফলে বড় পরিবর্তন আনতে পারে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা।

সব মিলিয়ে, বর্তমানে ময়মনসিংহ-১ আসনে নির্বাচনী লড়াইটি মূলত দুইটি শক্তির মধ্যে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। 

একদিকে ঐতিহ্য ও সাংগঠনিক শক্তির উপর ভর করা বিএনপি আর অন্যদিকে ধর্মভিত্তিক ভোট ব্যাংক ও দীর্ঘ মাঠ কার্যক্রমের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এখন শেষ সিদ্ধান্ত নেবেন ভোটাররাই।