গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায় বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম ও পূর্বপ্রান্তে এই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্ত থেকে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করছেন। রেল মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু রেল সেতু হবে বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরাল ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকসহ প্রায় ৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার। 

যদিও ডাবল লাইন হওয়ায় সেতুটির দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৬০ কিলোমিটার বিবেচনা করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সেতুর উভয় পাশে প্রায় দশমিক ৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, প্রায় ৭ দশমিক ৬৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট অ্যান্ড এবং লুক ও সাইডিংসহ মোট প্রায় ৩০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হবে। বঙ্গবন্ধু রেল সেতু ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাক হওয়ায় পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে চলাচলকারী সংশ্লিষ্ট ট্রেনগুলোকে ক্রসিংয়ের কারণে আগের মতো স্টেশনগুলোতে অপেক্ষা করতে হবে না। ফলে সংশ্লিষ্ট ট্রেনগুলোর রানিং টাইম আনুমানিক ২০ মিনিট কমবে, পরিচালন ব্যয় কমবে এবং রেলওয়ের আয় বাড়বে। এ সেতুতে গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন স্থাপন করা হবে। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে এ রেল সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হবে। ওই বছরই সেতুটি ট্রেন চলাচলের জন্য চালু করা হবে বলে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে আশা প্রকাশ করেন রেলপথমন্ত্রী।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে মূল প্রকল্প ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর এবং প্রথম সংশোধিত প্রকল্প গত ৩ মার্চ একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। অনুমোদিত মূল প্রকল্প ব্যয় ছিল মোট ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা যার মধ্যে জিওবি ২ হাজার ৯ কোটি এবং জাইকার প্রকল্প সাহায্য ৭ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা। অনুমোদিত প্রকল্প ব্যয় (প্রথম সংশোধিত) : মোট ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা, যার মধ্যে জিওবি ৪ হাজার ৬৩১ কোটি (২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ) এবং জাইকার প্রকল্প সাহায্য ১২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা (৭২ দশমিক ৪০)। এরই মধ্যে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ৪৩১ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। প্রথম সংশোধিত প্রকল্পের মেয়াদকাল ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। নির্মাণকাজ সমাপ্ত হওয়ার পর ১২ মাস ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ডের সংস্থান রয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।

সূত্রমতে, বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে দিনে ৪৪টি ট্রেন চলাচল করে। সিঙ্গেল লাইন হওয়ায় সেতু পার হতে সিগন্যালে বেশ খানিকটা সময় নষ্ট হয়। ওজন সীমাবদ্ধতার কারণে ভারী পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করতে পারে না। এ সেতুতে ট্রেনও পূর্ণগতিতে চলতে পারে না। ঈদের সময় সূচির বিপর্যয়ে পড়ে ট্রেন। নতুন ডাবল লাইন সেতুটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে এ সমস্যার সমাধান হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন। রাজধানীর সঙ্গে পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থারও অনেক উন্নয়ন হবে।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী কামরুল আহসান সময়ের আলোকে জানান, এরই মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সাইট বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা আসতেও শুরু করেছেন। মূল সেতুটি দুটি প্যাকেজের আওতায় বানানো হবে।