সাকরাইন উৎসব

ঘুড়ি ওড়ানি, বোকাট্টা আর আগুন খেলার উৎসব সাকরাইন। চক্ষুদার, ভোয়াদার, পানদার, কথাদার, মালাদার, পঙ্খী, পঙ্খীরাজ, চলনদার, পেটিদার, পাংদার, প্রজাপতি, দাপস, চিল, মানুষ, কচ্ছপ ঘুড়িসহ সাকরাইনে পুরান ঢাকার আকাশে কত ঘুড়িই না ওড়ে। তবে বোকাট্টা খেলতে কিন্তু সাধারণ চারকোণাকৃতি ঘুড়ির বিকল্প নেই।

প্রাচীনকাল থেকেই পৌষ সংক্রান্তিতে ঢাকায় ঘুড়ি ওড়ানির মেলা বসে। সেই মোগল আমলে ১৭৪০ সালের দিকে নায়েব-ই-নাজিম নওয়াজেশ মোহাম্মদ খানের আমলে ঘুড়ি ওড়ানো একটি উৎসবে পরিণত হয়েছিল বলে জানা যায়। আরও জানা যায়, নবাববাড়িতে ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা হতো।

প্রতিযোগিতার মাসখানেক আগেই শুরু হতো প্রস্তুতি। ঘুড়ি ও নাটাই তৈরি, সুতায় মাঞ্জা দেওয়া_ সব মিলিয়ে বিশাল কর্মযজ্ঞ। ঘুড়ি-কাটাকাটির জন্যই সুতায় মাঞ্জা দেওয়া হতো। দুই বাড়ির ছাদে অথবা কোনো মাঠে দুই দল সামনাসামনি দাঁড়িয়ে ঘুড়ি কাটাকাটির প্রতিযোগিতা হতো। ঘুড়ি ওড়ানির সঙ্গে বাজত দুই দলের ব্যান্ডের বাজনা। ঘুড়ি কাটা পড়লে সে লজ্জা ঢাকার জায়গা নেই, অপর পক্ষের আনন্দ ধরে না। যার ঘুড়ি দিয়ে বোকাট্টা হয়েছে তাকে কাঁদে করে বাদক দলসহ সারা মহল্লা চক্কর দেওয়া হতো। সাকরাইনের সেই জৌলুস কমেনি একটুও, বরং বেড়েছে।

সাকরাইন উৎসব
 সাক্রাইন উৎসবে যোগ হয়েছে ডিজিটাল অনুষঙ্গ_ ডিজে নাচ, প্রজেক্টর আর হাজার পাওয়ারের সাউন্ড সিস্টেম। সাক্রাইনে সারাদিন ঘুড়ি উড়িয়ে সন্ধ্যায় আগুন খেলা দিয়ে সাকরাইন বিদায় দেওয়া পুরনো প্রচলন। 

একজন মুখে কেরোসিন নিয়ে মুখের সামনে আগুনের মশাল ধরে, ফুঁ দিয়ে কেরোসিন আগুনের মশালে নিক্ষেপের ফলে আগুনের দলার সৃষ্টি হয়_ এটাই আগুন খেলা। ঢাকার ঘুড়ি ওড়ানি উৎসবকে স্থানীয়রা সাকরাইন বলেন। নামটি সংক্রান্তি থেকে কথ্য হতে হতে সাকরাইনে রূপ নিয়েছে।

পৌষ মাসের শেষ দিন এই উৎসবে মেতে ওঠেন ঢাকাবাসী।পুরান ঢাকার তারিখের হিসাবে এলাকাভেদে কিছুটা তারতম্য রয়েছে। মুসলমান অধ্যুষিত মহল্লাগুলোয় মোহাম্মদী পঞ্জিকা অনুসরণ করা হয় আর হিন্দু অধ্যুষিত মহল্লা যেমন_ শাঁখারীবাজারে লোকনাথ পঞ্জিকার হিসাবে ১৪ জানুয়ারি সাকরাইন পালিত হয়।

মূলত; পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়া, মুরগীটোলা, ধূপখোলা, দয়াগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী, নারিন্দা, সূত্রাপুর, কাগজিটোলা, বাংলাবাজার, লক্ষ্মীবাজার, কলতাবাজার, ধোলাই খাল, শাঁখারি বাজার, রায়সাহেব বাজার, নবাবপুর, বংশাল, নাজিরাবাজার, তাঁতী বাজার এবং লালবাগ এলাকার মানুষ এ উৎসবে দিনব্যাপী ঘুড়ি উড়ান। আয়োজন করেন নানা খাবারের। এছাড়া সন্ধ্যায় আতশবাজী ফোটানো এ উৎসবের অন্যতম অঙ্গ।