বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অর্জনের একটি সুন্দর চিত্র তুলে ধরে চীনের একটি ইংরেজি দৈনিক লিখেছে, বাংলাদেশ এখন প্রতিবেশীদের, বিশেষত ভারত অপেক্ষা রাজস্ব ঘাটতি, মারচেন্ডাইজ বাণিজ্য ভারসাম্য, কর্মসংস্থান, ঋণ এবং জিডিপির সাথে আনুপাতিক বিনিয়োগ হারের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে গেছে।

হংকং ভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক-সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়েছে-বাংলাদেশের মানব-উন্নয়ন কর্মসূচি, বিশেষত মেয়েদের শিক্ষার হার বৃদ্ধিতে জন্মহার ও বাল্য বিবাহ হ্রাস পেয়েছে।

গড় আয় বৃদ্ধি, জন্মহার হ্রাস ও শিশু পুষ্টির মতো মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে অনেক এগিয়ে গেছে।‘বাংলাদেশের জনগণ এই অর্থনৈতিক অগ্রগতির ব্যাপকভিত্তিক সুফল পাচ্ছে। সেই তুলনায় ভারত অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশের এই অর্থনৈতিক অগ্রগতির ফলে এ দেশের জনগণের জীবনমান বৃদ্ধি পেয়েছে- যা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।’ আন্তর্জাতিক থিংক ট্যাঙ্ক- দ্য ইনস্টিটিউট ফর পলিসি, অ্যাডভোকেসি অ্যা্ন্ড গভর্ন্যান্স (আইপিএজি)’র চেয়ারম্যান প্রফেসর সৈয়দ মুনির খসরুর মতে, বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক তারকা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।’

তিনি লিখেছেন, ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ তার বিচক্ষন আর্থিক ও ঋণ ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি, এর সামাজিক নিরাপত্তা জাল ও অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগের মাধ্যমে সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। এই আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষক আরো বলেন, বাংলাদেশে বিগত ৪০ বছরে অর্থনৈতিক অগ্রগতি সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে অব্যহত রয়েছে এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধির দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে আছে। যেখানে গোটা দক্ষিণ এশিয়ার জিডিপি হ্রাস পেয়ে ৬.৫৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, সেখানে ২০২০ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৩.৫ শতাংশ। তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশের জিডিপি’তে এক তৃতীয়াংশ অবদান রেখেছে কৃষি, তবে ২০১০ ও ২০১৮ সালের মধ্যে এ খাতে ১৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান বেড়েছে।

১৯৮০ সাল থেকে জিডিপিতে উৎপাদন খাতের অবদান দ্বিগুণ হয়েছে এবং ১৯৯০’এর দশক থেকে রপ্তানি ২০গুণ বেড়ে ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯ সালে দেশের অর্থনীতিতে রেমিটেন্স আয় ছিল ১৬.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কম মজুরির শ্রমিকরাও দেশের অর্থনীতিতে এই অবদান রাখে। খসরু আশা করেন যে, শক্তিশালী রেমিটেন্স, রপ্তানি ও কৃষি’র কল্যাণে বাংলাদেশ ২০২৬ সাল পর্যন্ত মাথাপিছু জিডিপিতে ভারতের চেয়ে এগিয়ে থাকবে।

ভারতের মাথাপিচু জিডিপি ২,০৯৮ ডলার থেকে কমে হয় ১,৯২৯ মাকির্ন ডলার এবং অর্থনীতি ২.৮৭ ট্রিলিয়ন মাকির্ন ডলার থেকে কমে হয় ২.৬৬ ট্রিলিয়ন ডলার। একই বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি হয় ৩৫৫ বিলিয়ন ডলার। ভারতে টানা ১৫ বছর প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ করে হবার পর মাথাপিছু আয় দাড়ায় ১,৯৬১ ডলার।

২০০৪ সালের পর থেকে বাংলাদেশের জিডিপি বাড়তে থাকে। খসরু বলেন, ২০০৮ সালের আগে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ছিল ভারতের মাথাপিছু জিডিপির অর্ধেক। তবে ২০১৪ সালের মধ্যে প্রবৃদ্ধি ৭০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছিল। করোনার কারণে ভারতের অর্থনীতি ৭.৩ শতাংশ হ্রাস পায়, তবে বাংলাদেশে করোনা সংকট সত্ত্বেও ৩.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।