বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি, রাবি:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বিভিন্ন হলগুলোতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পবিত্র গ্রন্থ কুরআন পুড়িয়ে, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করার চেষ্টার প্রতিবাদে মিছিল ও ষড়যন্ত্রকারীদের শাস্তির দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করে রাবি শিক্ষার্থীরা।
রবিবার (১২ জানুয়ারি) বিকেল ৩টায় রাবি সিনেট ভবন সংলগ্ন প্যারিস রোডে এ প্রতিবাদ মিছিল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এসময় বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো প্রদক্ষিণ করে।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে শহীদ জিয়াউর রহমান হল, সৈয়দ আমীর আলী হল, মাদার বখশ হল, শাহ মাখদুম হল, শেরে বাংলা হল, শহীদ হবিবুর রহমান হল ও মতিহার হলে রাতের আঁধারে পবিত্র কুরআন পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া জিয়াউর রহমান হলের দেওয়ালে বিজেপির লোগো আঁকানো হয়েছে।
এসময় "আল কুরআনের অপমান সইবে নারে মুসলমান", "নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবার", "দ্বীন ইসলাম দ্বীন ইসলাম জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ", "দিয়েছিতো রক্ত, আরও দিব রক্ত", "আল কোরআনের আলো, ঘরে ঘরে জ্বালো" এমনসব স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভ সমাবেশে রাবি ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, তিনদিন আগে রাবি কেন্দ্রীয় মসজিদে কোরআন পোড়ানো হয়েছে, রুয়েটেও এভাবে কোরআনকে পোড়ানো হয়েছে। এ ঘটনা কারা ঘটিয়েছে আমরা বুঝতে পারছি, ৫ আগস্টের পর যারা লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে তারাই এধরণের কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে, এবং একটা অসাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সৃষ্টি করতে চাচ্ছে আমাদের ভেতর। এই ঘটনা যারা ঘটিয়েছে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তাদের খুজে বের করতে হবে, তাদের ছাত্রত্ত্ব বাতিল করতে হবে এবং দেশের আইন অনুযায়ী খুব দ্রুত তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। আমরা যারা এই ক্যাম্পাসের ছাত্র সংগঠনগুলো আছি সবাই কোনোভাবে এই স্বৈরাচারের দোষরদের ষড়যন্ত্রে পা দিবোনা।
ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুসতাকুর রহমান জাহিদ বলেন, আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি এই ঘৃণ্য ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে। আমরা শুনেছি এর আগেও নাকি সেন্ট্রাল মসজিদেও একই ঘটনা ঘটেছে। কোরআন পুড়িয়ে যারা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করতে চায়, তারা ফ্যাসিস্ট শক্তির সহযোগী। এ দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে ভাঙার জন্য তাদের সকল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমরা স্পষ্ট জানিয়ে দিতে চাই, তাদের এই ষড়যন্ত্র কখনোই এখানে সফল হতে দেব না, দেব না, দেব না!
প্রফেসর মো. আখতার হোসেন মজুমদার (প্রশাসক, জনসংযোগ দপ্তর, রাবি) বলেন," যে ঘটনা ঘটানো হয়েছে তা পরিকল্পিত ঘটনা। এখনো ষড়যন্ত্র চলছে আগামিতেও তারা চেষ্টা করবে ষড়যন্ত্র চালানোর। তাই আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। তদন্ত কমিটি গঠন সহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনির সাথেও কথা বলা হয়েছে, আগামি তিন দিনের ভেতর এবং অনতিবিলম্বে সাত দিনের ভেতর পূর্ণ তদন্তের রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
আন্দোলনে একাত্মতা পোষণ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র মিশন, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কসহ প্রায় ৪ শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, এ ঘটনা তদন্তে ৯ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি ঘোষণা করেছে রাবি প্রশাসন। রোববার দুপুর ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এক জরুরি সভায় এই কমিটি ঘোষণা করা হয়।